সোমে ফ্রান্স,বুধবার আমেরিকায়! বন্ধু ট্রাম্পের সাথে প্রতিবেশী বাংলাদেশকে নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন মোদী !

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরপর দুটি দেশের সফরে যাচ্ছেন। তিনি ফ্রান্সের উদ্দেশে রওনা দেবেন এবং বুধবার সেখান থেকে আমেরিকায় যাবেন। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর বৈঠক রয়েছে সেই বৈঠকে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন, শুল্কনীতি ছাড়াও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের সূচি ঘোষণা করেছেন বিক্রম। তিনি জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প শপথ নেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমেরিকা যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা দুই দেশের সুসম্পর্কের প্রতিফলন। ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই রাষ্ট্রনেতার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে।

অন্যদিকে, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অবৈধ বাসিন্দাদের যার যার দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপর হয়েছেন ট্রাম্প। প্রথম দফায় ফেরানো হয়েছে ১০৪ জন অবৈধ ভারতীয় বাসিন্দাকে। পাশাপাশি, প্রতিবেশী মেক্সিকো, কানাডা এবং আমেরিকার বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী চীনের বিরুদ্ধে নতুন শুল্কনীতি প্রয়ের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে জাপানকেও।

ট্রাম্পের পরবর্তী নিশানা কারা হবে, তা নিয়ে বিশ্ব জ জল্পনা চলছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সেই তালিকায় ভারতের নামও রয়েছে! কারণ, আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট যে দেশগুলির পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক বসিয়েছেন, তাদের সকলের সঙ্গেই ওয়াশিংটনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ঘটনাচক্রে, ভারতের ক্ষেত্রেও ঘাটতি রয়েছে। তবে এখনও ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর ব্যাপারে ট্রাম্প মুখ খোলেননি। এই পরিপ্রেক্ষিতে মোদী কি শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের আশ্বাস আদায় করতে পারবেন? মোদীর আমেরিকা সফর ঘিরে তাই জল্পনার পারদ তুঙ্গে।

• আরও পড়ুন– মুসলিম তোষণকারী দল আপ,কংগ্রেসকে হটিয়ে দিল্লির আকাশে বাতাসে হিন্দুত্বের জয় জয়কার!

ভারত ইতিমধ্যেই কিছু দামি মার্কিন পণ্যের ওপর আমদানি কর ছাড়ের ঘোষণা করেছে। অনেকে এই সিদ্ধান্তকে ট্রাম্পকে ‘তুষ্ট রাখার চেষ্টা’ বলে মনে করছেন। কারণ, প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকার সময় মোদীর সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ সত্ত্বেও কিছু ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে সই করেছিলেন ট্রাম্প। এই দফাতেও তেমন কিছু হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে গত মাসে মোদীর যে কথা হয়েছে, তাতে আরও বেশি অস্ত্র কেনার চাপ ভারতকে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এবং দু’দেশের আমদানি-রফতানির ‘ভারসাম্য’ বৃদ্ধির কথাও বলেছেন।

বৈঠকে নানা প্রসঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদেশ সচিব। বিক্রমের কথায়, “আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না যে বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হবে, তবে এই প্রসঙ্গ ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।” সম্প্রতি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের পর মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে বিদেশ সচিব বলেন, “কূটনৈতিক প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ সরকার তাদের এই দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।”

• আরও পড়ুন– নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সমন পাঠিয়ে তলব করে কূটনৈতিক সবক শেখালো ভারত।

মিস্রী জানিয়েছেন, আমেরিকা সফরের আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরোঁর আমন্ত্রণে ফ্রান্স যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ম্যাকরোঁর এলিসি প্যালেসে নৈশভোজে অংশ নেবেন মোদী। এরপর ১১ তারিখে ম্যাকরোঁর সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিষয়ক শীর্ষবৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন মোদী। ফ্রান্সে দু’দিন কাটানোর পর ১২ ফেব্রুয়ারি রওনা দেবেন আমেরিকার উদ্দেশ্যে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের আমেরিকা সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণও বটে। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার পর এটিই দু’জনের প্রথম বৈঠক হতে চলেছে। শপথ গ্রহণের এক সপ্তাহের মাথায় গত ২৭ জানুয়ারি মোদীকে ফোন করেছিলেন ট্রাম্প। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে দু’জনের দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল। তার পরের দিনই ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছিলেন, ফেব্রুয়ারিতেই মোদীর সঙ্গে বৈঠক হতে পারে তাঁর। অন্যদিকে, ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনের কথা জানিয়ে এক্স পোস্টে মোদী লিখেছিলেন, “তাঁর ঐতিহাসিক দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য অভিনন্দন জানালাম। আমরা আমাদের জনগণের কল্যাণে এবং বিশ্বের শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার জন্য একসঙ্গে কাজ করব।” মোদী-ট্রাম্প সম্পর্ক ব্যক্তিগত স্তরেও বেশ মসৃণ। প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্পের শেষ বিদেশ সফরও ছিল ভারতে। ২০১৬-২০ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন ট্রাম্প বারবারই মোদীকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। এবার তাই দুই ‘বন্ধু’র বৈঠকের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব।