প্রাচীনকাল থেকেই বিদেশি শক্তির কবরস্থান হিসেবে পরিচিত আফগানিস্তান। রাশিয়া থেকে আমেরিকা পর্যন্ত বহু দেশ এই ভূখণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। প্রতিবারই বিদেশি শক্তিকে পরাজিত করে তালিবান শাসনের ক্ষমতায় এসেছে। এবার ভারতের মাটি থেকে সরাসরি পাকিস্তানকে হুমকি দিল আফগানিস্তান। আফগানিস্তানকে কোনও দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আফগান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুত্তাকির হুঁশিয়ারি, ‘আফগানদের সাহস পরীক্ষা করার চেষ্টা করবেন না। আমেরিকা-রাশিয়াকে জিজ্ঞেস করুন।’
বৃহস্পতিবার রাতে, পাকিস্তান কাবুলে হামলা চালিয়েছে। আফগান ভূখণ্ড থেকে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের অভিযোগ তুলে, তেহরিক-ই-তালিবান (পাকিস্তান)-এর ঘাঁটিতে এই হামলা চালানো হয়।
রাজধানী কাবুলের পর এবার সীমান্তবর্তী আফগান প্রদেশে পাকিস্তানি সেনার হামলার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার জেরে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার সরাসরি পাকিস্তানকে সতর্কবার্তা দিয়েছে।
তালিবান প্রতিরক্ষা দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘আমাদের সার্বভৌম ভূখণ্ডে লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। নজিরবিহীন হিংসা ও প্ররোচনামূলক এই পদক্ষেপের ফলাফল ভাল হবে না।’’
আফগান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি জানিয়েছেন, “সীমান্তের কাছে দুর্গম এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। আমরা মনে করি পাকিস্তান ভুল করেছে। প্রায় ৪০ বছর পরে অবশেষে উন্নতি এবং শান্তির পথে এগোচ্ছে আফগানিস্তান। আফগানদের সাহসের পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ যদি তা করতে চায়, তবে আগে আমেরিকা, ন্যাটো এবং রাশিয়াকে প্রশ্ন করা উচিত। তারাই ভালো বলতে পারবে আফগানিস্তান কী করতে পারে।”
সাম্প্রতিক সময়ে আফগান-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। উভয় পক্ষই সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গি হামলার অভিযোগ তুলেছে। দুই দেশের সরকারের এই দূরত্বকে কাজে লাগাতে ভারত উদ্যোগী হয়েছে। প্রথমবারের মতো তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে এসেছেন। শুক্রবার দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
পাকিস্তানের সীমান্ত সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ভারত এবং আফগানিস্তান উভয় দেশই! তাই সন্ত্রাস দমনে নয়াদিল্লি এবং কাবুলের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। তালিবান বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকে এই কথা জানিয়েছেন এস জয়শংকর। একই বিষয়ে পাকিস্তানকে সরাসরি আক্রমণ করে মুত্তাকি বলেন, “আমরা পাকিস্তান সরকারকে সতর্ক করতে চাই যে এই পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আফগান ভূখণ্ডে পাকিস্তানের যেকোনও কার্যকলাপের নিন্দা জানাই। আফগান জনগণের ধৈর্য এবং সাহসকে চ্যালেঞ্জ করা উচিত নয়।”
তালিবান বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জয়শংকর জানিয়েছেন যে ভারত খুব শীঘ্রই কাবুলে একটি পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস চালু করবে। পাশাপাশি, আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যখাতে ভারতের পক্ষ থেকে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে নতুন ৬টি প্রকল্প শুরু করা হবে।


