বাংলাদেশে এবার নিষিদ্ধ হতে চলেছে আওয়ামী লীগ। এই বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ ইউনুসের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে একনকতন্ত্র কায়েম করতে সচেষ্ট ইউনুস।এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মোহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতায় আসার পর একে একে দেশ থেকে মুছে ফেলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের স্মৃতি। এখন শেখ হাসিনার সম্পত্তিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে জঙ্গী ছাত্ররা। এবার মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতিতে ফেরার পথ একেবারে বন্ধ করতে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে ইউনুস সরকার।
কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কার কমিশন জানিয়েছিল, আওয়ামী লীগকে আদালত বা সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা না করলে তারা নির্বাচনে লড়তে পারবে। ভোটযুদ্ধে নামতে হাসিনার কোনো বাধা নেই। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘোষণায় ক্ষেপে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জানায় তারা। একই সুরে সুর মেলায় বিএনপি, জামাতও। গত তিন দিনে ফের একবার উত্তপ্ত উঠেছে বদলার বাংলাদেশ। দিকে দিকে মুজিব ও হাসিনার সম্পত্তি ধ্বংস করা হচ্ছে। হামলার মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এই পরিস্থিত গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।
- আরও পড়ুন– নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সমন পাঠিয়ে তলব করে কূটনৈতিক সবক শেখালো ভারত।
এই বিষয়ে যে রাজনৈতিকগুলোকে একজোট করার প্রক্রিয়া চলছে, তা স্পষ্ট। এদিন সজীব আরও বলেন, “প্রথমত এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও একধরনের ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুঁয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যেকোনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো নির্বাচিত সরকার নয়। তাহলে তারা কীভাবে অন্য দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে? নিজেই এর উত্তর দিয়ে সজীব দাবি করেন, “বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াও চারটি আইন রয়েছে, যেখানে নির্বাহী আদেশে যেকোনও দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে এর আইনি কাঠামো কী হবে, সে বিষয়ে সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিচার প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে দলীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বাতিল করা-সহ যেকোনও ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করতে পারে। তবে বিষয়টি যেহেতু আইন নবায়নের সঙ্গে যুক্ত, সে ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে।”
কিন্তু এই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যতই দাবি করুন না কেন, ইউনুস সরকারের বৈধতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। তাই তারা কীভাবে একটিকে নিষিদ্ধ করবে বা প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানকে ফেরত চেয়ে অন্য দেশকে চিঠ দিতে পারে, এরকম একাধিক প্রশ্ন উঠছে। এছাড়া এই ছাত্রনেতারাই হাসিনার পতনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন। অথচ তাঁরাই একটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া ও নিষিদ্ধ করার ডাক দিচ্ছেন। এটি কি স্বৈরতন্ত্র নয়? এদিকে, ক্ষমতা ছাড়তে চান না ইউনুসও। এক সময় ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার ডাক দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি। কিন্তু আদতে বদল নয়, বদলার রাজনীতি করছে তাঁর সরকার। এখন ইউনুস উঠে পড়ে লেগেছেন কোনও না কোনও অজুহাতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে, যাতে নির্বাচনের আগে পথের কাঁটা সরে যায়।