মহম্মদ ইউনূসের বাংলাদেশে এবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চারশোর বেশি রাজনীতিবিদের (এমএনএ/এমপিএ) মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ এই নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসেলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সংশোধিতাদেশ অনুযায়ী, মুজিব সরকারের সদস্যরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’। রাষ্ট্রপতির আদেশে আইন মন্ত্রকের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এতে কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী উল্লেখিত নেতাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল হয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শুধু মুক্তিযকালীন প্রবাসী সরকারই নয়, আরও চার শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
- আরও পড়ুন — শশী থারুরের কূটনীতি সফল হলো ! ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের প্রতি ‘ভালবাসা’ ভুলতে বাধ্য হল কলম্বিয়া !
এর প্রথম শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন সেই বাংলাদেশি পেশাজীবীরা, যারা বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন এবং বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ছিলেন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে রয়েছেন তারা, যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারী, দূত বা অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয় শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সকল শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সকল বাংলাদেশি সাংবাদিককে। চতুর্থ শ্রেণিতে রয়েছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২’-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ প্রবাসী সরকারের এমএন, এমপিএ এবং উল্লেখিত চার শ্রেণির সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। নতুন অধ্যাদেশে তাদের মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর ফলে তাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হয়েছে। জামা আইন সংশোধনেরূড়ান্ত খস ও সংশ্লিষ্ট নথি গত১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম স্বাক্ষর করেন। এরপর খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কয়েক দফাচনার বিষয়বস্তু হয়। জানা গেছে, প্রথম দফায় ৬ চারশোর বেশিনীতিবিদ, অর্থাৎ ১৯৭০ সালের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি বহাল রাখার নেওয়া হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হয়। এ পর্যায়ে ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার শর্তে খসড়াটি অনুমোদন করা হয়। পরে আইন মন্ত্রণয় সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি অনুমোদন দেয়। এই ধারাবাহিক রাষ্ট্রপ অনুমোদনক্রমে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।
- আরও পড়ুন – নিজেদের ব্যর্থতা অন্যের উপর চাপাবেন না, বাংলাদেশকে সতর্ক করে দ্রুত নির্বাচন চাইলো ভারত !
সরকার জানিয়েছে যে এই শ্রেণিবিন্যাসের ফলে কারও সুযোগ-সুবিধায় কোনো পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ ‘মুক্তিযোদ্ধা সহযোগী’দের পূর্বের মতোই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মান বহাল থাকবে। অধ্যাদেশে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হবেন তারা, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ভেতরে বা বাইরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করেছেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধা, ইপিআর পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, কিলো ফোর্স, নৌ কমান্ডো, আনসার এবং মুজিবনগর সরকারের স্বীকৃত যোদ্ধারা। এছাড়া, যেসব নারী পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, অর্থাৎ ‘বীরাঙ্গনা’ হিসেবে পরিচিত, তারাও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র মর্যাদা লাভ করবেন। যুদ্ধকালীন সময়ে যারা ফিল্ড হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স বা চিকিৎসা-সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারাও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।