শেখ মুজিবর রহমানের ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি হাসিনা বিরোধীদের আগুনে পুড়ে ছাই হলো !
সিঁড়ির মাঝে রাখা ছিল তাঁর বুলেটবিদ্ধ দেহের সাদা-কালো ছবি। পাঁচ দশক পূর্বে বাংলাদেশের রক্তাক্ত পরিবর্তনের সময় সেখানেই শেখ মুজিবুর রহমানের দেহ গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। মুজিবের কন্যা হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটিকে একটি সংগ্রহশালায় পরিণত করেন। সোমবার, তাঁর সরকারের পতনের পর, উন্মত্ত জনতা সেই ভবনটিকে ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয় যা মুজিবের স্মৃতি সমৃদ্ধ।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর অত্যাচারের প্রতিবাদে, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন, “রক্ত দিয়ে রক্তের ঋণ শোধ করতে আমি প্রস্তুত।” এই ভাষণ ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। এর ফলে সে বছরের ডিসেম্বরে এশিয়ার মানচিত্র পরিবর্তিত হয়। তবে, স্বাধীনতার পর মুজিবের শাসন বেশি দিন টিকেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে সেনা অভ্যুত্থানে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
শুধু মুজিব নয়, ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু, তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, তাঁর তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং ১০ বছর বয়সী শেখ রাসেল, এবং দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল সহ ঘাতকের বুলেটে নিহত হন। বিদেশে অবস্থানের কারণে মুজিবের দুই কন্যা হাসিনা ও রেহানা বেঁচে যান। ঘটনাচক্রে, সোমবার তাঁরা দুজন সেনার হেলিকপ্টারে ঢাকা ত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পরেই মুজিবের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটি আগুনে পুড়ে যায়।
১৯৭১ সালের যে চেতনা বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দান করেছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তা বিপরীত পথে চলা শুরু করে। অভিযোগ উঠেছে যে, প্রশাসন থেকে রাজনীতি পর্যন্ত সর্বত্র পাকিস্তানি ভাবধারার প্রভাব সে সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কিছু ঘণ্টা পর, সেনাবাহিনীর সমর্থনে প্রেসিডেন্ট হওয়া খোন্দকার মোশতাক আহমেদ বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে রেডিও বাংলাদেশ করেন। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, যা ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল, তা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী পরবর্তী এক বছরের মধ্যে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে যায়।
অভিযোগ করা হচ্ছে যে মুক্তিযোদ্ধা এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের সমর্থকদের উপেক্ষা করা হচ্ছে। জিয়াউর রহমান, হুসেন মহম্মদ এরশাদ, এবং খালেদা জিয়ার শাসনামলে এই প্রবণতার অভিযোগ ছিল। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা যখন জাতীয় সংসদের ভোটে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন, তখন থেকে এই প্রবণতা কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে বলে কিছু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন। তারা মনে করেন, হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে জামাতে ইসলামির ‘নিষিদ্ধ’ অংশগ্রহণ পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারে। মুজিবের মূর্তি ভাঙা এবং ধানমন্ডির সংগ্রহশালায় অগ্নিসংযোগ তাদের মতে ‘ইঙ্গিতবাহী’।