আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ছ’মাস পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ফের মুখ খুললেন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের উদ্দেশ্যে ৫২ মিনিটের অডিও বার্তায় উঠে এল বাংলাদেশবাসীর বিরুদ্ধে ‘চক্রান্তের’ অভিযোগ।
আওয়ামী লীগের সামাজিক মাধ্যমের পাতায় যখন হাসিনার এই অডিও বার্তা সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে, তখন ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে তাণ্ডব চালাচ্ছেন হাসিনা-বিরোধীরা। শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ভবনের উপরের তলায় অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। বুধবার হাসিনার অডিও বার্তাতেও উঠে আসে ধানমন্ডির বাড়ির কথা।
হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পরেও একবার হামলা হয়েছিল এই বাড়িতে। হাসিনা বলেন, “ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে জাতির পিতা (শেখ মুজিব) স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল। তখনও এই বাড়িটি তারা লুঠপাট করেছিল। কিন্তু আগুন দিয়ে পোড়ায়নি, ভাঙেনি।” ধানমন্ডির বাড়ির স্মৃতিচারণা করে হাসিনা জানান, শেখ মুজিব কখনও সে দেশের রাষ্ট্রপতি ভবনে বা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকেননি। এই ছোট বাড়িটিতেই ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, “আমার মা অনেক কষ্ট করে এই বাড়িটির প্রতিটি ইট নিজের হাতে গেঁথেছিলেন।” তাঁর অভিযোগ, বর্তমানে বাংলাদেশের ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। তবে এই অভিপ্রায় সফল হবে না বলেও জানান তিনি। হাসিনার মতে, যাঁরা এসব করার চেষ্টা করছেন তাঁরা নিজেদের ‘দুর্বলতা’ এবং ‘হীনম্মন্যতা’ প্রকাশ করেছেন।
হাসিনা স্মরণ করিয়ে দেন যে, ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটি পরবর্তীতে মুজিবের পরিবার ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেনি। সেটি একটি সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, বিশ্বের বড় বড় নেতারা এই বাড়িতে এসেছেন। আজ এই বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কেন? বাড়িটির কী অপরাধ ? এই বাড়িটিকে কেন এত ভয় পাচ্ছেন?” আওয়ামী লীগের নেত্রীর দাবি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এর বিচার করবেন। তিনি বলেন, “আমরা দুই বোন যে স্মৃতিটুকু নিয়ে বেঁচেছিল, আজ সেই স্মৃতিটুকুও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এর আগে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। আজ ভেঙে ফেলা হচ্ছে।” কথাগুলি বলতে বলতে হাসিনার গলা শুনে মনে হল, ঈষৎ ফুঁপিয়ে উঠলেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে সংবিধান, স্বাধীনতা, পতাকা পেয়েছি— তা কয়েকজন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারবে না। এ শক্তি তাঁদের এখনও হয়নি। এটি তাঁদের দুর্বলতার প্রকাশ। তাঁরা দালান ভাঙতে পারে, কিন্তুকে ধ্বংস করতে না। ইতিহাস প্রতিশোধ নেয়। এ কথা তাঁদের মনে রাখতে হবে। যাঁরা এসব করছেন, তাঁরা হীনম্মন্যতার পরিচয় দিচ্ছেন। তাঁদের হয়তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা পছন্দ নয়। পাকিস্তিদের অধীনে থাকা এবং পাকিস্তানিদের পা চাটাই হয়তো তাঁদের পছন্দ।”
- আরও পড়ুন- জামিন হল না চিন্ময়কৃষ্ণের !কারণ জানাতে ইউনূস সরকারের থেকে হলফনামা চাইল বাংলাদেশের হাইকোর্ট!
হাসিনার কথায়, “বাংলাদেশকে নিয়ে ধ্বংসের খেলা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল ছিল, উন্নয়নের বিস্ময় ছিল। সেই বাংলাদেশকে চরমভাবে ধ্বংস করে জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের দেশ হিসাবে পরিণত করা হয়েছে। এটিই হল সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়।” তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে। গোটা বাংলাদেশ আজ সেই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, “কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। এদের ধ্বংসের খেলা, রক্তের খেলা বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।” বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনও আসলে একটি ‘ষড়যন্ত্র’ ছিল বলে মনে করছেন তিনি।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকেও আক্রমণ করেছেন আওয়ামী লীগের নেত্রী। হাসিনার দাবি, ইউনূসকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা তিনিই করেছিলেন। কিন্তু ইউনূস তৎকালীন সরকারের আমলে ‘আর্থিক দুর্নীতি’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন হাসিনা। অডিওবার্তায় ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৯৯০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজারের পদে ৬০০০ টাকার বেতনের চাকরি পেয়েছিলেন। আমি ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পরে এই গ্রামীণ ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে দাঁড় করিয়েছিলাম। গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাও ইউনূসকে দিয়েছিলাম। তিনি বার বার আমার কাছে ধর্ণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সেখান থেকে লাভ অংশ গ্রামীণ ব্যাংকে যাবে। কিন্তু তা যায়নি। তিনি আর্থিক দুর্নীতি করেছেন। তাঁর ক্ষমতার লোভ আজ বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে।”
আওয়ামী লীগ নেতীর ৫২ মিনিটের এই অডিয়োবার্তা মূলত ছাত্রসমাজের উদ্দেশে ছিল। বাংলাদেশের ছাত্রদের উদ্দেশে হাসিনা বলেন, “সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আমাদের কোনো রাগ, অভিযোগও নেই। আমি জানি তোমাদের বয়সটাই এরকম।” তবে এই গোলমালের মধ্যে সব ছাত্ররা প্রবেশ করেনি বলেও জানান তিনি। হাসিনা বলেন, “সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের এসবের দূরে থাকা উচিত। তারা যেন এই ধ্বংসযজ্ঞে অংশ না নেয়।” ছাত্রদের উদ্দেশে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর আমলে শিক্ষার জন্য ‘চমৎকার পরিবেশ’ তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘জঙ্গিদের হাতে’ তুলে না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
2 Comments
Pingback: ইউনূসের জঙ্গী বাহিনীর মদতে শেখ মুজিবের স্মৃতি বিজড়িত ৩২ ধানমন্ডির বাড়ি ভাঙার কাজ চলছে! - প্রথম
An outstanding share! I have just forwarded this onto a colleague who was doing a little homework on this.
And he in fact bought me breakfast because I found it for him…
lol. So allow me to reword this…. Thanks for the meal!!
But yeah, thanx for spending time to talk about this matter
here on your web site.