বাংলাদেশে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অশান্তির মধ্যে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর খবর। পাকিস্তানের সাহায্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ করার চক্রান্ত সামনে এসেছে। সূত্রের খবর, পাকিস্তান ও জামায়াতে ইসলামী অর্থাৎ জামাতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই বিদ্রোহের পরিকল্পনা করেছিলেন বাংলাদেশের লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুর রহমান।
জামাত নেতাদের সঙ্গে তাঁর যেমন বন্ধুত্ব রয়েছে, তেমনই পাকিস্তানের সমর্থক বলেও তিনি পরিচিত। তাঁদের সঙ্গেই যোগসাজশে ফয়জুর রহমান বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। এই বিষয়ে তিনি এ বছর মার্চ মাসে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেছিলেন বলে জানা গেছে। এই কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ফয়জুর রহমানের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানকে জানিয়ে দেন। এমনিতেই ফয়জুরের ডাকা ওই বৈঠকে বরিষ্ঠ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। পরে এই বৈঠকের খবর প্রকাশ্যে আসার পর বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডাইরেক্টর জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফজুর রহমানকে নজরবন্দি করে রেখেছে। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, পরবর্তী কয়েকদিন মধ্যেই বড় ধরনের কোনও ঘটনা ঘটতে চলেছে।
- আরও পড়ুন —পাকিস্তানে আস্ত ট্রেন ‘হাইজ্যাক’ এর পর ১৮২ জনকে জিম্মি, দাবি না মানলে সবাইকে হত্যার হুমকি!
ফয়জুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে এবং এই পরিকল্পনায় যুক্ত রয়েছে এমন দশ-বারোজন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি)-এর নাম উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন:
১) মেজর জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান, বর্তমানে চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার এবং ২৪তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি। তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে প্রমোশন পেতে চান।
২) মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক, ৩৩তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি এবং কুমিল্লার এরিয়া কমান্ডার।
৩) মেজর জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ মসিউ রহমান, ১৯তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি এবং ঘাটাইলের এরিয়া কমান্ডার।
৪) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুল হাসান, ৬৬তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি এবং রংপুর এরিয়া কমান্ডার।
৫) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম, ১০ম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি এবং কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার।
৬) মেজর জেনারেল এএসএম রিদওয়ানুর, ১০মফ্যান্ট্রি ডিশনের জিওসি এবং জালালাবাদ এরিয়া কমান্ডার
৭) মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর মাহমুদুল্লাহ এমদাদুল ইসলাম, ৭ম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি এবং বরিশাল এরিয়া কমান্ডার।
৮)মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, ১১তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি এবং বগুড়া এরিয়া কমান্ডার।
৯) মেজর জেনারেল এসএম কামাল হোসেন।
এছাড়াও জানা গিয়েছে, প্রাক্তন সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূইয়া, মুহাম্মদ আবু বেলাল শফিউল হক , অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সরওয়ার্দী, এহতেশামুল হক এবং প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম কামল সম্মিলিতভাবে বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের বিরোধী কর্মকর্তাদের নিয়ে জামাতের সাহায্যে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে চান। ইসলামপন্থী লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুর রহমান সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল করতে চান, এ কথা বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকেই অনুমান করেছিলেন। গত জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের গোয়েন্দা (আইএসআই প্রধান ও তাঁর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফরকালে ফয়জুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন, এমন খবরও পাওয়া গিয়েছিল।

বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার বরাবরই আদর্শগতভাবে মধ্যপন্থী এবং তিনি চান না কঠোর ইসলামপন্থীদের হাতে বাংলাদেশের ক্ষমতা চলে যাক। তিনি মনে করেন, এতে বাংলাদেশের অস্থিরতা আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে প্রতিবেশী সঙ্গেও তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে আগ্রহী। প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানের সময় তিনিই শেখ হাসিনাকে নিরাপদে ভার চলে আসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।বর্তমানে বাংলাদেশে যখন আইনশৃঙ্খলা ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে, তখন সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। যদিও এ ব্যাপারে তাঁর কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই এবং দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই তিনি এরকম মনে করেন বলে জানিয়েছিলেন। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত শুধু আইনৃঙ্খলার দিকটি সেনাবাহিনী দেখবে। ইতিমধ্যে সেই ওয়াকার উজ জামানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও জামাতপন্থী লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়জুর রহমানের বিদ্রোহের চক্রান্তের খবর সামনে আসায় যথেষ্ট চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।