সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে স্তব্ধ বাংলাদেশ!
সরকারি চাকরির নিয়োগে সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন বিস্তার লাভ করেছে। ঢাকার প্রধান সংযোগস্থলগুলিতে ছাত্রদের অবরোধের ফলে রাজধানীর প্রায় ৫০টি রাস্তা তিন দিন ধরে যানজটে স্থব্ধ হয়ে পড়েছে, এবং ঢাকার সাথে দেশের রেল ও সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ২০১৮ সালে সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য মোট ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত এবং ৪৪ শতাংশ সাধারণ কোটা নির্ধারিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ, এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত ছিল। কোটা-বিরোধী আন্দোলন বিস্তার লাভ করায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের, নারীদের এবং জেলা কোটার ৩০ শতাংশ, ১০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করেন। শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ বহাল রাখা হয়। এর ফলে ছাত্ররা আন্দোলন সমাপ্তির সিদ্ধান্ত নেয়।
২০১৮ সালের সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০২১ সালে হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন, হাই কোর্ট এই নির্দেশকে অবৈধ বলে রায় দেয়, যার ফলে পুনরায় আগের মতো সংরক্ষণ প্রত্যাবর্তন হয়। এর প্রতিবাদে ছাত্ররা আবার আন্দোলনে নামেন এবং দাবি জানান যে, সরকারি নিয়োগে সব ধরনের কোটা ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে বাতিল করতে হবে। এদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ বুধবার এই বিষয়ে এক মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে তা বিবেচনা করে শীর্ষ আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। পরবর্তী শুনানি ৭ অগস্ট হবে। এই সময়ে কোটা নিয়ে কোনও কথা হবে না। আন্দোলনকারীরা মামলায় অংশ নিতে পারেন, কিন্তু তাঁদের অবিলম্বে রাস্তা ছেড়ে ক্লাসে ফিরে আসতে হবে এবং জনসাধারণকে স্বস্তি দিতে হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ব্যাখ্যা করেন যে, সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্টের রায় সহ সম্পূর্ণ বিষয়টি স্থগিত করেছে, ফলে ২০১৮ সালের সরকারি নির্দেশ বহাল থাকবে। এর মানে হলো, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য সরকারি চাকরিতে তিন ধরনের সংরক্ষণ বহাল থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলন অর্থহীন হয়ে পড়ে। তবে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সংরক্ষণ উচ্ছেদ সরকারের সিদ্ধান্ত এবং আদালতের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি জানান, সরকার যতক্ষণ না কোটা ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করে, ততক্ষণ অবরোধ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।