বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও ‘মজবুত’ করতে চায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে এই বার্তাই দিয়েছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা মুহাম্মদ আসিফ। তিনি জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক ‘গভীর’ করার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নত করতে ঢাকা ও ইসলামাবাদরিকভাবে উদ্যোগী হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। ঘটনাচক্রে, ভারত ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি এবং উদ্ভূত উত্তেজনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও ‘দৃঢ়’ করার বার্তা দিয়েছেন আসিফ।
গত শুক্রবার ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনে একটি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষন্ত্রী আসিফ। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘জিও নিউজ’ জানিয়েছে যে ওই অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্ব আরও ‘গভীর’ বার্তা দেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী ও সাধারণ জনগকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ককে ইসলামাবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে। উল্লেখ্য কয়েক দিন আগেই ঢায় ও পাকিস্তানের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় দেড় দশক পর এই স্তরে দেশের মধ্যে এমন বৈঠক। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী ইসাক দারের দু’দিনের সফরে সোমবার ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। তবে পহেলগাঁওকাণ্ডের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেই সফর পিছিয়ে দিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে ইসলামাবাদে বাংলাদেশি দূতাবাসের অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
- আরও পড়ুন —১৯৬০ সালের সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি বাতিল !চেনাবের জল আটকাল ভারত! দেখুন সেই মুহূর্তের ভিডিয়ো!
পহেলগাঁওকাণ্ডের পর বিভিন্ন দেশ ওই নশংস হত্যাকাণ্ড তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ওই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিতে প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। গত মঙ্গলবার জঙ্গিদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া এবং চিনের মতো দেশগুলোর নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছিল। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যেও অনেকেই মঙ্গলবারই মুখ খুলেছিল। পহেলগাঁও হামলার বিরোধিতা করে শ্রীলঙ্কা, ভূটান ও নেপাল। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি আসেনি মঙ্গলবার। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতি আসতে আসতে বুধবার দুপুর পেরিয়ে যায়।
গত মঙ্গলবারের ওই হামলায় স্থানীয় কয়েকজন জঙ্গি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও জানা যাচ্ছে, বাকি জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে এ দেশে প্রবেশ করেছিল। বাংলাদেশের ওই বিবৃতিতে সন্ত্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা থাকলেও পাকিস্তান প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। পাকিস্তানও দাবি করেছে যে পহেলগাঁও সঙ্গে তাদের কোনও সংযোগ নেই। কাশ্মীরে এই জঙ্গি হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। নয়াদিল্লি সিন্ধু চুক্তি স্থগিত পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা, ইসলামাদ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাদের আকাশীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শিমলা চুক্তি নিয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। এর মধ্যে, উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে পাক সেনার বিরুদ্ধে। ভারতের সঙ্গে এই উত্তেজনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে আরও কাছে টানতে উদ্যোগী হয়েছে পাকিস্তানের সরকার।