বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস কি পদত্যাগ করতে চলেছেন? এই জল্পনাতেই এখন তোলপাড় বাংলাদেশের নাগরিক মহল। ঝড় উঠেছে রাজনীতির আঙিনাতেও। সূত্রের খবর, ইউনুসের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউনুসের বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে দেখা করেছেন নাহিদ। তা নিয়েই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। তবে কি ইউনুসের পদত্যাগ এখন সময়ের অপেক্ষা? এটাই এখান বাংলাদেশের কাছে কোটি টাকার প্রশ্ন।
নাহিদ সংবাদমাধ্যমকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, পদত্যাগের গুঞ্জন শুনেই তিনি এসেছিলেন। তিনি বলেন, “দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা আজ সকাল থেকে পদত্যাগ একটি খবর শুনে আসছি। সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ইউনুসেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়াম।” এরপর জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক একপ্রকার বিস্ফোরক মন্তব্য করেন নাহিদ। ইউনুস তাকে ,আমি এভাবে কাজ করতে পারব না। ইউনুস আরও বলেছেন যে, সকল রাজনৈতিক দল যদি একত্রিত না হয়, তাহলে এইভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।

তবে শুধু শুনেছেন এমনটা নয়। নাহিদ জানিয়েছেন যে তিনি তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি ইউনুসকে এখনই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত না নিতে অনুরোধ করেছেন। প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যেই সে দেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ইউনুস সরকারকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর স্পষ্ট নির্দেশনা হলো, দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা এবং সামরিক বিষয়ে ইউনুস সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। এখন দেখার বিষয়, পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোনদিকে মোড় নেয়।
ইউনূস একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে, এই নির্বাচন নিয়েও তিনি বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন আদৌ অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না, সে বিষয়ে খোদ প্রধান উপদেষ্টাও নিশ্চিত নন। সূত্রের মতে, ব্যালট ছিনতাই রোধ করা যাবে কি না, পুলিশ ব্যালট ছিনতাই ঠেকাতে সক্ষম হবে কি না, এ নিয়েও ইউনূস সন্দিহান। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ব্যর্থতা এবং কাঙ্ক্ষিত সংস্কারে ব্যর্থতার দায় তিনি নিতে চান না বলে জানিয়েছেন।
- আরও পড়ুন – বাংলাদেশকে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ বানাতে ভারতের বিরুদ্ধে পেছন থেকে বাংলাদেশকে এ কি মদত দিচ্ছে তুরস্ক !
গত ৫ অগস্ট গণ-আন্দোলনের চাপে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং ভারতে চলে যান। এরপর ৮ অগস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যা বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে। বলা হয়েছিল যে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কারের পরেই বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হবে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের উপর নির্বাচনের জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে। তাদের মতে, ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্নেই অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে, আর বাকি সংস্কারের কাজ নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক দলগুলির চাপ ও সরকারি কাজে অসহযোগিতার কারণে ইউনূস বিরক্ত হয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইছেন বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। তবে এখনো ইউনূসের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি, আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।