ফরাক্কা, তিস্তা নিয়ে কোনও চুক্তি নয়’,শেখ হাসিনার ইলিশ ও আম পাঠানোর এ কি প্রতিদান দিলো মমতা ব্যানার্জী!
শনিবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর তৃণমূল আপত্তি জানিয়েছে। সোমবার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লিখে ফরাক্কা-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির নবীকরণ এবং তিস্তা নদীর জল ভাগাভাগি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। তিনি লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা ও ফরাক্কার জলবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সাথে কোনো চুক্তিতে আমার তীব্র আপত্তি আছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থে কোনো আপস করব না।”
চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, “গঙ্গা ও তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আপনার কিছু আলোচনা হয়েছে হয়তো। কিন্তু রাজ্য সরকারের মতামত না নিয়ে এমন একতরফা আলোচনা কাম্য নয়।” মমতা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চান এবং ছিটমহল বিনিময়, রেল ও বাস যোগাযোগের মতো পদক্ষেপে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “জল অত্যন্ত মূল্যবান। প্রাণধারণের রসদ নিয়ে কোনো সমঝোতা করতে আমরা প্রস্তুত নই।” মমতা জলবণ্টনের বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে অভিযোগ করেন এবং বাংলাদেশ চিনের সাহায্যে ড্যাম নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। সম্প্রতি, নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ‘ফরাক্কা-গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি’ নবীকরণের জন্য ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ গঠন করা হয়। এই পদক্ষেপ দুই দেশের জল বণ্টন চুক্তি নবীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে। এর পরদিন তৃণমূল কংগ্রেস মোদী সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে।
১৯৯৬ সালে যখন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তি হয়, তখন ঢাকায় শেখ হাসিনার সরকার এবং দিল্লিতে এইচডি দেবগৌড়ার যুক্তফ্রন্ট সরকার ছিল। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু চুক্তিতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। বর্তমানে, মোদী সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অগ্রাহ্য করে রাজ্যকে প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অনুযায়ী ১৯৯৬ সালের চুক্তি, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন ভারত ৪০ হাজার কিউসেক জল পায়। ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে ফিডার ক্যানাল দিয়ে এই জল কলকাতা বন্দরে প্রবাহিত হয়, এবং বাকি জল বাংলাদেশে যায়। মার্চ ও এপ্রিল মাসে জলের পরিমাণ কমে গেলে সমস্যা দেখা দেয়। চুক্তি মোতাবেক, মার্চ মাসের ২০ দিন বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক জল পায়, এবং পরবর্তী ১০ দিন ভারত একই পরিমাণ জল পায়। এপ্রিল মাসে প্রথম ২০ দিন ভারত এবং শেষ ১০ দিন বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক জল পায়। বাকি সময়ে নদীর জলপ্রবাহ দুই দেশ সমান ভাগে পায়।
মোদীকে পাঠানো চিঠিতে মমতা বলেছেন, গঙ্গার জলের পাশাপাশি ফরাক্কা থেকে পাওয়া জল পশ্চিমবঙ্গের জনজীবনে এবং কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। তিনি আরও বলেছেন, ফরাক্কা ফিডার ক্যানালের মাধ্যমে অন্তত ৪০ হাজার কিউসেক জল পেলে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখা সম্ভব। অন্যথায়, গঙ্গায় পলি জমে কলকাতা বন্দরের জাহাজ চলাচলের নাব্যতা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।