বিএনপি ও জামাত-ই-ইসলাম মিলে বাংলাদেশে ‘সরকার পতনের অপচেষ্টা’ চালাচ্ছে,বলছে হাসিনা সরকার, অবশেষে প্রত্যাহার আন্দোলন!
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন। রবিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করেন তিনি। নিহতদের মধ্যে ছাত্র এবং পুলিশ সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, এই তথ্য রবিবার পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী এবং তদন্ত চলমান থাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ১ জুলাই থেকে অবিরাম আন্দোলন শুরু করে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন পরবর্তী সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী দিন থেকে এই আন্দোলনের কেন্দ্রে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘর্ষ, হিংসা, ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ড এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। সংবাদ মাধ্যম যদিও হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেছে, সরকার প্রথমবারের মতো মৃতের সংখ্যা জানিয়েছে। তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছেন।
যদিও সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবুও কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী বিক্ষোভে শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবীদের মধ্যে অধিক মৃত্যু ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই শিশু, কিশোর ও তরুণ। হাসপাতাল, স্বজন এবং মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষে প্রায় ২১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫০ জনের বয়স, পেশা, আঘাতের ধরন এবং কোন এলাকায় আহত বা নিহত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে ১১৩ জন শিশু, কিশোর ও তরুণ। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নিহতদের অধিকাংশের শরীরে মারাত্মক গুলির চিহ্ন ছিল। ছররা গুলি, প্যালেট বা রাবার বুলেটের চিহ্ন এবং অন্যান্য আঘাত কম ছিল। মৃত্যুর কারণ এবং গুলির ধরন নির্ধারণের জন্য ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত হলেও প্রতিবেদন প্রণয়ন হয়নি, এবং অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দেহ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালানো হয়েছে। সরকার যেহেতু মূল দাবি মেনে নিয়েছে, তাই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছেন। রবিবার (২৮ জুলাই) রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাথে আলোচনার পর ডিবি কার্যালয় থেকে এক ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সমন্বয়করা উল্লেখ করেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং এর প্রেক্ষিতে অনেকে অপ্রত্যাশিতভাবে আহত ও নিহত হয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ এবং অন্যান্য হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের দাবি করছি।’
▶️ কর্মসূচী প্রত্যাহার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ সমন্বয়কের বিবৃতির একটি ভিডিও ভয়েস অফ আমেরিকার হাতে এসেছে। এই ভিডিওটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। pic.twitter.com/ggUkJBj3c1
— VOA বাংলা (@VOABANGLA) July 28, 2024
রবিবার বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রণালয় একটি বিস্তারিত বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে দেশের পরিস্থিতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই বিবৃতি মূলত অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের প্রতি লক্ষ্য করে দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বিক্ষোভ ও নাশকতাকে বিএনপি এবং তাদের মৌলবাদী মিত্র দল জামাত-ই-ইসলামির সরকার উৎখাতের চেষ্টা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিরোধী দলের নাশকতাকারী ও দুষ্কৃতীরা আন্দোলন দখল করে আগুন লাগানো, ভাঙচুর এবং লুটপাট শুরু করার পর পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠে। পুলিশের উপর আক্রমণ এবং হত্যার ঘটনা ঘটে। বিদেশ মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে, এই নাশকতার প্রধান লক্ষ্য ছিল সরকার পতন ঘটানো। এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনের অফিসে আগুন দেওয়া, বিমানবন্দর দখলের চেষ্টা এবং মেট্রোরেল সহ নির্বাচিত সরকারি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। ‘দুর্যোগের দিনে’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে বাংলাদেশ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।