সংরক্ষণ বিরোধীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর জেরে অচল হলো বাংলাদেশ!
সংরক্ষণ বিরোধী ছাত্র-যুবদের ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশ প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে বন্ধের প্রভাব পড়েছে। হাসপাতাল, সংবাদমাধ্যম এবং জরুরি পরিষেবা বাদে অধিকাংশ বেসরকারি অফিস এবং বাজার বন্ধ রয়েছে।
সংরক্ষণ বিরোধী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ ও আধাসেনার হামলার প্রতিবাদে, মৃত্যুর বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থার অবসানের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ পালন করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের গণপরিবহণ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে, জাতীয় সড়কগুলিতে যানজট দেখা দিয়েছে। ঢাকার রাস্তায় কেবল পুলিশের গাড়ি এবং অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। তবে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ অব্যাহত রাখছেন।
সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের যৌথ মঞ্চ, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বুধবার রাতে পুলিশি অত্যাচার ও শাসকদলের আক্রমণের প্রতিবাদে ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ ঘোষণা করেন। এর প্রভাব দেশজুড়ে দ্রুত পরিলক্ষিত হয়। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আন্দোলন দমনে তৎপর হয়ে উঠেছে। সোমবার রাতে ঢাকা পুলিশ বিএনপির মূল দফতরে অভিযান চালায়। নয়া পল্টনের ওই দফতর থেকে বোমা, পেট্রোল বোমা, লাঠি এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলে ঢাকা পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সংরক্ষণ বিরোধীদের সংঘর্ষে মঙ্গলবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জনের প্রাণহানি ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ’ ঘোষণা করা হয় এবং ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাস ও হস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খালি করার চেষ্টায় বুধবার পুলিশ প্রতিরোধের মুখে পড়ে।
অবশেষে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর খালি করানোর পর, শনির আখড়া এলাকায় আন্দোলনকারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেখানে রাতে সংঘর্ষ বাধে। একটি উড়ালপুলের টোল প্লাজ়া এবং পুলিশ কিয়স্কে আগুন লাগানো হয়। নির্বিচারে ভাঙচুর চলে, এমনকি চলমান যানবাহনেও হামলা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলপ্রয়োগ করে, কাঁদানে গ্যাস, লাঠি, সাউন্ড গ্রেনেড এবং ছররা গুলি ছোড়া হয়।
এদিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার এক পুলিশ আধিকারিক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিএনপি এবং জামাত-ই-ইসলামির কর্মীরা হামলা চালায়। অন্যদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের দ্বারা ঘেরাও করা উপাচার্যকে মুক্ত করতে গিয়ে পুলিশ সংঘর্ষে জড়ায়। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ছয় জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘আমি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তারা যে কেউ হোক না কেন, তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।’’