কোনও আজগুবি অভিযোগ নয়, একেবারে তথ্যপ্রমাণ-সহ প্রকাশ্যে এসেছে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের ভয়াবহ রিপোর্ট। গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে হাসিনা সরকারকে উৎখাতের পর ইউনুসের নেতৃত্বে হায়েনার মতো হিন্দুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে জঙ্গিরা। এই ধর্মীয় মৌলবাদীদের রোষানলে পড়ছেন সেখানকার শুধু সংখ্যালঘু হিন্দুরা নয়,সাথে সাথে আদিবাসী ,উপজাতি,বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ ।
রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র ৫ মাসে ওপার বাংলায় খুন করা হয়েছে ৩২ জন হিন্দুকে। ১৩ জন সংখ্যালঘু মহিলাকে ধর্ষণ ও গণধর্ষণ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আঘাত নেমে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে। ধ্বংস করা হয়েছে ১৩৩টি মন্দির। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, লাগাতার এই ঘটনা ঘটলেও চোখ বুজে রয়েছে ইউনুসের প্রশাসন।
বাংলাদেশের মাটিতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর এই রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইউনিটি কাউন্সিল। তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের ৪ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর এই সময়কালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকার বদলের মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ২০১০টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটে। এমনকী চাপের মুখে বাংলাদেশ সরকার স্বীকারও করে নেয়, এর মধ্যে ১৭৬৯টি ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে তারা। মামলাও শুরু হয়। তবে সেই মামলায় খুব বিশেষ তৎপরতা দেখা যায়নি সরকারের তরফে।
- আরও পড়ুন —মমতার সাথে জেহাদী মুসলিম যোগ ! শুভেন্দুর বিস্ফোরক দাবীতে কি ফেঁসে গেলেন মমতা ব্যানার্জী !
সংখ্যালঘু কাউন্সিলের মুনীন্দ্র কুমার নাথ জানান, এই রিপোর্টটি মূলত দুই ধাপে তৈরি করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত । সরকার পরিবর্তনের পর এই সময়ে সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটে এবং পুলিশ প্রশাসনও সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় ছিল। দ্বিতীয় ধাপটি ২০ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালকে অন্তর্ভুক্ত করে, যখন ইউনুসের উপেষ্টা সরকার ক্ষমতায় বসে। তবে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় খুব লাগাম পড়েনি। প্রথম ১৫ দিনের মধ্যেই ৯ জন সংখ্যালঘু নিহত, ৪ জন ধর্ষিত এবং ৯১৫টি বাড়িতে হামলা হয়েছে। এছাড়া ৫৩টি দোকানে ভাঙচুর এবং ৬৯টিন্দির ভাঙচুর করা।
২০ আগস্ট উপদেষ্টা সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের ক্ষমতা যায় ইউনুসের হাতে। এতে অবশ্য বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। পরবর্তী চার মাসে ২৩টি খুন, ৯টি ধর্ষণ এবং ৬৪টি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এই সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় ছিল। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিবর্তে, এসব ঘটনা মানুষের রাজনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয়। শুধু তাই নয়, সংখ্যালঘুদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারি চাকরিতে থাকা সংখ্যালঘুদের জোরপূর্ব ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়।
সংখ্যালঘু কমিটির রিপোর্টের পাশাপাশি গত বুধবার রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, গত বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে। হাসিনা বিদায়ের পর থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বেড়েছে। তাদের দোকানপাট, পূজাস্থলে ভাঙচুর করা হয়েছে। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ এলাকায়। বিশেষকরে উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও , লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রংপুর এবং সিলেট ,খুলনা উত্তপ্ত ছিল।