পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সোমবার বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, যা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল সমাজমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানের পরমাণু হুমকির সামনে মাথা নত করা হবে না। পাশাপাশি, ‘বন্ধু দেশের’ মাটি থেকে এমন মন্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলেও উল্লেখ করেছে নয়াদিল্লি।
বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমেরিকা থেকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের কিছু মন্তব্য আমাদের নজরে এসেছে। পরমাণু অস্ত্র নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা পাকিস্তানের প্রধান কৌশল। এই ধরনের মন্তব্যে যে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা প্রকাশ পেয়েছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আসা উচিত। এমন একটি দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ থাকা নিয়ে যে সন্দেহগুলি ছিল, সেগুলি আরও দৃঢ় হচ্ছে। সেখানে সামরিক বাহিনী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যোগসাজশ করেছে।’’ এরপর আমেরিকার উদ্দেশে বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ তৃতীয় দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ভারত কখনোই পরমাণু হুমকির সামনে মাথা নত করবে না। আগেও তা স্পষ্ট করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেব।’’
- আরও পড়ুন — মৌলবাদীদের রোষে পড়েছে ‘উদয়পুর ফাইলস’। ছবি মুক্তির পরই প্রযোজককে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে!
পাকিস্তানে ভারতের সেনা অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং সেই পরবর্তী দুই দেশের সংঘাতের পরে দু’মাসের মধ্যে এটি দ্বিতীয় বার আমেরিকায় গেলেন পাক সেনাপ্রধান। ফ্লরিডার টাম্পায় শিল্পপতি আদনান আসাদ আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখান থেকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। যদি মনে হয় আমরা ধ্বংসের পথে এগোচ্ছি, তবে অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ধ্বংস হব।’’ পর্যবেক্ষকদের মতে, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে তৃতীয় কোনও দেশকে এ ধরনের পরমাণু হুমকি দেওয়ার ঘটনা বিরল।
এর পর সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন মুনির। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছিল। এই চুক্তি স্থির করে সিন্ধু এবং তার পাঁচ উপনদীর জল কীভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বণ্টিত হবে। সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগা— এই তিন নদী পাকিস্তানের উপর দিয়ে প্রবাহিত। চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে পাকিস্তানে জলের সঙ্কট হতে পারে। মুনির বলেন, ‘‘ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আমরা অপেক্ষা করব। যখন বাঁধ তৈরি হয়ে যাবে, তখন আমরা ১০টি মিসাইল ছুড়ে সেই বাঁধ ধ্বংস করে দেব।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘সিন্ধু নদ ভারতের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমাদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রের কোনও অভাব নেই।’’
সম্প্রতি খনিজ তেল নিয়ে আমেরিকা ও পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। ইসলামাবাদের উপর ট্রাম্প ১৯ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছেন। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে দুই দেশকেই বার্তা দেওয়া হয়েছে।