বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থা নিয়ে বারবার সরব হচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাই তৃণমূলের বার্ষিক সভা থেকেও তিনি এ বিষয়ে আক্রমণ চালিয়েছেন। অন্যদিকে, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ তত্ত্ব তুলে মমতার দিকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের ভোটার তালিকা যে সব পক্ষের নজরে রয়েছে, তা মমতা ও শুভেন্দু দুই যুযুধানই সোমবার স্পষ্ট করে দিলেন, রাজ্যের দুই প্রান্ত থেকে।
তৃণমূলের বার্ষিক সভার দিনেই শিলিগুড়িতে ‘উত্তরকন্যা অভিযান’-এর ডাক দেয় রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চা। সেখানেই বক্তৃতার সময় অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী বিতর্কে মন্তব্য করেন শুভেন্দু। তাঁর নিশানায় ছিলেন বাংলাদেশি মুসলিম এবং রোহিঙ্গারা। বিরোধী দলনেতা বলেন, “ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দুরা এসেছেন, তাঁরা মোদীজির চোখে শরণার্থী। অনুপ্রবেশকারী নন। এখানে ভারতীয় মুসলিমেরা আছেন। আপনাদের কোনও চিন্তা নেই। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। কিন্তু বাংলাদেশি মুসলিম এবং রোহিঙ্গাদের একজনকেও ভোটার তালিকায় থাকতে দেব না।” বিহারে বিধানসভা ভোটের আগে বিশেষ সমীক্ষা শুরু করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। আগেই কমিশন জানিয়েছে, আগামী দিনে অন্যান্য রাজ্যেও এই প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় তারা। শুভেন্দু নিজেও এই বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করেছেন। সোমবার ফের তিনি দাবি করেন, বিহারের মতো ভোটার সমীক্ষা এই রাজ্যেও চাই।
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর নিপীড়নের অভিযোগে সোমবার ধর্মতলার সভা থেকে বিজেপির দিকে আবার আঙুল তোলেন মমতা। তিনি বলেন, “বাংলা ভাষায় নাকি কথা বলা যাবে না! কে মাছ খাবে, কে মাংস খাবে, কে ডিম খাবে, তা ওরা ঠিক করবে! বিজেপির একজন নেতা বলছেন এখানে নাকি ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে। মোট কত রোহিঙ্গা? আপনি এত লোককে বাংলাতেই বা পেলেন কোথায়?” মমতা হুঁশিয়ারি দেন, “বাংলার মানুষকে যদি বাংলা বলার জন্য বাইরে গ্রেফতার করা হয়, এই লড়াই কিন্তু দিল্লিতে হবে।” এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করার সময় তিনি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। আবার ‘ভাষা আন্দোলন’ শুরু হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূলনেত্রী।
আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মমতা ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে একটি নতুন স্লোগান দিয়েছেন। বিজেপিকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, “আমাদের দর্শন, বিজেপির বিসর্জন। বাকিটা নির্বাচনের সময় বুঝিয়ে বলব।” শিলিগুড়ির সভা থেকে মমতার মন্তব্যের জবাবে শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “চ্যালেঞ্জ করছি ২০২৬-এ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব। আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি।” তিনি আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে হারানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ধর্মতলার সভা থেকে রাজ্যে বেকারত্ব দূর করার প্রসঙ্গ নিয়ে মন্তব্য করেন মমতা। তৃণমূল নেত্রীর দাবি, তাঁর সরকার রাজ্যে বেকারত্ব ৪০ শতাংশ কমিয়েছে। ‘উত্তরকন্যা অভিযান’-এর মঞ্চ থেকে শুভেন্দু মমতাকে পাল্টা আক্রমণ করেন। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, “বড় বড় কথা বলছেন। এই রাজ্যে নাকি তিনি সকলকে কাজ দিয়েছেন। তাহলে ৬০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক কেন? ২ কোটি ১৫ লক্ষ বেকার কেন? শিল্প তুলে দিয়েছেন কেন? এর কোনও উত্তর নেই তাঁর কাছে।”
উত্তরবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে বিজেপি বহুবার সরব হয়েছে। সোমবার তৃণমূল ও রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু ফের বলেন, “উত্তরবঙ্গে প্রকৃতি যা দিয়েছে, সব লুট করা হয়েছে। বালি, পাথর, গাছ কিছুই অবশিষ্ট নেই। পাহাড়ও বঞ্চনার শিকার।” তিনি অভিযোগ করেন, চা-বাগানের শ্রমিকেরা সঠিক মজুরি পান না, এবং উত্তরবঙ্গের হাসপাতালগুলিতে নিউরোলজিস্ট নেই। শুভেন্দুর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার এমস নির্মাণ করতে চাইলেও রাজ্য সরকার জমি দিচ্ছে না। তিনি জানান, ৪ অগস্ট তিনি দলের ৬৫ জন বিধায়ককে নিয়ে কোচবিহারে যাবেন। দলীয় বিধায়কদের নিয়ে উত্তরকন্যাতেও যাবেন বলে সতর্ক করেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, “সচিবের সঙ্গে দেখা করব। এর আগে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এবার দেখব কে বাধা দেয়।”
গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের পরাজয়ের বিষয়ে সোমবার মন্তব্য করেন শুভেন্দু। তিনি সরাসরি কোচবিহারের জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে দায়ী করেন। শুভেন্দুর অভিযোগ, গণনাকেন্দ্রে প্রবেশ করে নিশীথকে হারানোর জন্য চার ঘণ্টা সিসিটিভি বন্ধ রেখে ছাপ্পা মারা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি প্রমাণ করে দেব।” আসলে, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিশীথ গত বছরই হাই কোর্টে একটি মামলা করেন।