আমরা বাংলাদেশের মধ্যে বাস করছি বলে মনে হচ্ছে। এভাবে ওরা আক্রমণ করবে। জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিদের সামনে শুয়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আক্রান্তরা। একই সঙ্গে এলাকায় পাকাপাকিভাবে বিএসএফ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি ওঠে। ওয়াকফ আইন বিরোধী আন্দোলনের (Murshidabad Waqf Violence) নামে গত শুক্রবার ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদের নামে চলে মুসলিমদের তাণ্ডব। একের পর এক গ্রাম এবং সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
জঙ্গি মুসলিমদের অত্যাচারে ভিটেমাটি হারিয়ে বহু মানুষ বর্তমানে আশ্রয়হীন অবস্থায় দিনযাপন করছেন। গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য বাংলায় উপস্থিত হয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার মালদহ এবং শনিবার সামসেরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে তাঁরা পরিদর্শন করেন। তাদের উপস্থিতিতে গ্রামবাসীরা বিশেষত মহিলাদের, কান্নার শব্দে উত্তাল হয়ে ওঠে গ্রামের আকাশ বাতাস । এমনকি মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে বিলাপ করতেও দেখা যায় আক্রান্তদের ।
জানা গিয়েছে, কমিশনের প্রতিনিধিরা সমস্ত হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিএসএফ ক্যাম্প স্থাপন সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ঘটনার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও সামসেরগঞ্জের বেশ কিছু এল এখনও থমথমে। আতঙ্কে রাতের ঘুম উধাও সেখানকার বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতিতে আজ শনিবার মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা পৌঁছাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। রাজ্য প্রশাসনের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। আক্রান্ত বাসিন্দারা বলেন, আমরা কি বাংলাদেশে বাস করছি? এটি কি কোনও বাংলা? ধুলিয়ানের বাসিন্দারা জাতীয় মহিলা কমিশনকে জানান, আতঙ্কে তারা ঘুমাতে পারছেন না। অবিলম্বে এলাকায় বিএসএফ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান। এমনকি প্রয়োজনে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথাও শোনা যায়।
শুধু তাই নয়, পুরো ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি তুলেছেন গ্রামের মানুষজন। মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁরা পুরো বিষয়টি পর্যেক্ষণ করছেন এবং সেই অনুযায়ী রিপোর্ট করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং গোটা দেশের মানুষ আক্রান্তের পাশে রয়েছে বলেও এদিন মন্তব্য করেছেন কমিশনের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন বলেও উল্লেখ করেন তারা ।
প্রসঙ্গত ঘটনার পর থেকে কেটে গেছে কয়েকদিন। ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে সামসেরগঞ্জের অন্তর্গত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম বেতবনা। গত সপ্তাহে সেই গ্রামেই ঘটে ভয়াবহ হামলার ঘটনা। দুষ্কৃতীদের অবাধ তাণ্ডবের সাক্ষী হয়েছেন সেখানকার মানুষ। একের পর এক বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুষ্কৃতীদের হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে সেখানকার একাধিক মন্দির। অভিযোগ উঠেছে, মহিলাদের সম্মান নিয়েও হুমকি দিয়েছে হামলাকারীরা।
আর তা মনে পড়লেই রাত্রে এখনও ঘুম ভেঙে উঠে পড়েন গৃহবধূ রুম্পা মণ্ডল। সবকিছু হারিয়ে অন্যান্যদের মতোই একেবারে সাধারণ গ্রামের এই গৃহবধূর ঠাই হয়েছে মালদহের পারলালপুর হাইস্কুলে। রুম্পা বলেন, “সকাল থেকে রান্না করে খেতে বসেছিলাম। হঠাৎ করে চিৎকার চেঁচামেচি শুনলাম! সবাই বলছে, ওরা সবকিছু জ্বালিয়ে দিচ্ছে, ভেঙে দিচ্ছে। প্রাণে বাঁচতে সবাই ছুটে পালাচ্ছে।”
রূম্পা জানান, প্রথমে তিনি বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। সেই সময়েই একদল দুষ্কৃতী তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর চালায়। অভিযোগ অনুযায়ী, রূম্পার স্বামীকেও মারধর করা হয়। স্বামীকে বাঁচাতে গেলে দুষ্কৃতীরা তাঁকে ধর্ষণ করার ও ধর্মান্তররণের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। কোনওরকমে নিজের স্বামীকে উদ্ধার করে এলাকা থেকে পালিয়ে যান পেশায় বিড়ি শ্রমিক রূম্পা মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন সাহায্য করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি, বারবার সাহায্য চেয়েও সাড়া মেলেনি। বিএসএফ না এলে কী হতে পারত, তা ভাবলে এখনও শিউরে উঠছেন তিনি।
উল্লেখ্য , কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বর্তমানে সামসেরগঞ্জসহ বিস্তৃত এলাকায় বিএসএফ মোতায়েন রয়েছে। অন্তত সাত কোম্পানি বাহিনী সেখানে দায়িত্ব পালন করছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও গোটা এলাকাজুড়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় মানুষজন আতঙ্কে রয়েছেন।