মুর্শিদাবাদে শুক্রবার থেকে ক্রমাগত বেড়েছে হিংসার ঘটনা। সুতি ও সামশেরগঞ্জ এলাকায় শনিবার বিক্ষোভ ও হামলা চরম পর্যায়ে পৌঁছায় । শনিবার সামশেরগঞ্জের জাফরাবাদে একটি বাড়িতে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালায়। সেই সময় বাধা দিতে গিয়ে হামলাকারীদের হাতে পড়ে বাবা-ছেলে। নির্মমভাবে তাঁদের হত্যা করা হয়। একদিকে বিডিও অফিসে ভাঙচুর এবং পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, অন্যদিকে ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদের হিংসা পরিবেষ্টিত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর আর্জিতে উল্লেখ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন জরুরি। কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর সেই আর্জিতে সম্মতি দেয়।
এবার মুর্শিদাবাদে AFSPA জারির দাবি জানালেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন জারি করার প্ৰস্তাব দিয়েছেন তিনি। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিকে উপদ্রুত ঘোষণা করে, মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদিয়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী AFSPA জারির দাবিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছেন জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। (Anti Waqf Protests in Murshidabad)
ওয়াকফ আইন বিরোধী আন্দোলনের ফলে মুর্শিদাবাদে অশান্তি চরমে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে এবং নতুন করে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর এসেছে। এই পরিস্থিতিতে জ্যোতির্ময় AFSPA জারির দাবি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, বর্তমান পরিস্থিতিকে শুধুমাত্র অরাজকতা বললে তা যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, তৃণমূল সরকারের তুষ্টিকরণের রাজনীতি এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।
জ্যোতির্ময় অভিযোগ করেছেন যে, সংশোধিত ওয়াকফ আইন পাস হওয়ার পর যেভাবে হিংসা ছড়িয়েছে, তাতে আইনশৃঙ্খলার প্রকৃত চিত্র সবার সামনে প্রকাশিত হয়েছে। সশস্ত্র মুসলিমরা হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করছে, সরকারি সম্পত্তি ধংস করছে, এমনকি পুলিশবাহিনীকেও রেহাই দিচ্ছে না। কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নির্দেশ দিয়েছে। এতে প্রশাসনের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে।
আরও একধাপ এগিয়ে জ্যোতির্ময় চিঠিতে লিখেছেন, ‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাতে হচ্ছে, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের যে ভাবে আতঙ্কিত করা হচ্ছে, তাঁদের সমাজচ্যুত করার চেষ্টা চলছে, এবং তাঁদের উপর যে ভাবে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে, তা ১৯৯০ সালে কাশীরি পণ্ডিত প্রস্থানের ঘটনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে, তবে এবার সেটি কাশ্মীরে নয় বাংলায়।’ ১৯৫৮ সালের AFSPA ইতিমধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীর, মণিপুরের মতো কিছু রাজ্যে কার্যকর হয়েছে। এই আইনের অধীনে সেনাবাহনী বিশেষ ক্ষমতা লাভ করে। কোনও ধরণের ওয়ারেন্ট ছাড়াই কাউকে গ্রেফতার করতে পারে, বাড়িতে প্রবেশ করে তল্লাশি করতে পারে, এমনকি প্রয়োজনে বল প্রয়োগও করতে পারে।