২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বলেছে, পুরো প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে এবং ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। সেই সঙ্গে রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, তিন মাসের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
ফেব্রুয়ারিতেই শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল আদালত। বুধবার জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলার রায় ঘোষণা করবে। ঘোষিত রায়ে বলা হয়েছে যোগ্য-অযোগ্যাছাই করা সম্ভব হয়নি। যাঁরা চাকরি করছিলেন তাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন বলেও জানিয়েছে শ্ষ আদাল। সেই সঙ্গে জানিয়েছে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত সবাই বেতন পাবেন।
২০১৬ সালের এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই শুনানির পর ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে। এর ফলে ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি শীর্ষ আদালতে মামলার শুনানি শেষ হয়। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট যে তালিকা প্রকাশ করে, তাতে বলা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকালে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সেই ঘোষণা মতোই রায় ঘোষণা হল।
এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের মামলায় একাধিক জটিলতা ছিল। এর অন্যতম হল যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাইয়ের সমস্যা। কীভাবে যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করা হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। শুনানি শেষে আদালত জানিয়েছিল, এই মামলায় আসল তথ্য জানা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু আসল উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট উদ্ধার করা যায়নি, তাই ওএমআর শিটকে আসল বলে ধরা হবে তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এসএসসিকে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কমিশনের আইনজীবি জানিয়েছিলেন, ‘র্যাঙ্ক জাম্প’ এবং প্যানেল-বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য তাঁদের কাছে। তবে ওএমআর শিট কারচুপির কমিশনের কাছে নেই।
শীর্ষ আদালতে এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের বক্তব্য ছিল যে, এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়েই অনেকে চাকরি পেয়েছেন। তাই ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের মামলায় হাই কোর্টের রায় বহাল থাকা উচিত। অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে জানানো হয় যে এতজন শিক্ষক চাকরি একসঙ্গে বাতিল করা হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিলের রায়ে ২০১৬ সালেরোগ প্রক্রিয়া বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল। যারা মেয়াদ উত্তর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন, সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।চার সপ্তাহ মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদসহ বেতন ফেরত দিতে বলা হয় ওই চাকরি প্রাপকদের । হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে পৃথক ভাবে শীর্ষ আদালতে মামলা করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। দফায় দফায় মামলা করেন চাকরিহারারাও। প্রাথমিক শুনানির পরে গত ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ চাকরি বাতিলের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল।
গত ২৭ জানুয়ারি এই মামলার শুনানিতে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে কি না সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি খন্না । নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কতটা কঠিন , তা-ও জানতে চান তিনি। তখন মূল মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান অনেকে চাকরির না করেও নিয়োগ পেয়েছেন বলে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যাঁরা চাকরির আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবার নতুন করে পরীক্ষা নেয়া যেতে বলে প্রধান বিচারপতির এজলাসে জানান বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সেই নিয়োগের পুরো প্যানেলই বাতিল করারও সওয়াল করেছিলেন তিনি। এবার সেই মামলার রায় ঘোষণা করল প্রধান বিচারপতি খন্নার বেঞ্চ।