চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের বেহাল অবস্থা। ঘরের মাঠেও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দ দেখাল না পাক ক্রিকেটাররা। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং—ক্রিকেটের সব বিভাগেই দিশাহীন গত বারের চ্যাম্পিয়নরা। নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেটে ৩২০ রানের জবাবে পাকিস্তান ৪৭.২ ওভারে করল ২৬০ রান। মিচেল স্যান্টনারদের দল জিতল ৬০ রানে।
টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তান অধিনায়ক মহম্মদ রিজ়ওয়ান। দলের বোলিং শক্তির উপর আস্থা রেখেছিলেন রিজ়ওয়ান। শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হ্যারিস রউফ তিন জোরেোলারের কেউই নিউ জ়িল্যান্ডের ব্যাটারদের চাপে রাখতে পারেননি। পরে ৩২১ তাড়া করতে নেমেও বাবর আজ়মরা শুরু করেন টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজে! প্রথম ৭ ওভারে ১ উইকেটে ১৪ রান করেন রিজ়ওয়ানেরা। ১০ ওভারের পর পাকিস্তানের রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ২২। তখন ম্যাচ হেলে পড়ে কিউয়িদের দিকে।
পাকিস্তান ক্রিকেট এখন অতীতের ছায়া। ইমরান খানের সময়কার আগ্রাসী মানসিকতা নেই এখনকার দলে। তবু এমন ম্যারম্যারে পাকিস্তান দলও অবিশ্বাস্য। চোট সারিয়ে ফেরা শাহিন, নাসিমরা বলের গতি আগের থেকে কমিয়েছেন। কমেছে তাঁদের বলের ধারও। সেই সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন উইল ইয়ং, টম লাথাম, গ্লেন ফিলিপ্সরা। ডেভন কনওয়ে (১০), কেন উইলিয়ামসন (১), ডারিল মিচেল (১০) রান পাননি। তাও নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস পৌঁছে ৩২০ রানে। ইয়ং এবং লাথামের জোড়া শতরান চাপে ফেলে দেয় পাকিস্তানকে।
করাচির ২২ গজ ব্যাটারদের জন্য সহজ ছিল না। বিভিন্ন বাউন্সের সঙ্গে ছিল সুইং। তবু পাকিস্তানের জোরে বোলারদের উপর দাপট দেখালেন নিউ জ়িল্যান্ডের তিন ব্যাটার। ওপেনার ইয়ং ১১৩ বলে ১০৭ রান করেন। ১২টি চার এবং ১টি ছয় মারেন। প্রথম ২ উইকেট পড়ার চাপ সামলান ঠান্ডা মাথায়। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন পাঁচ নম্বরে নামা লাথাম। দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেন তিনিও। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১০৪ বলে ১১৮ রানের ইনিংস খেলে। ১০টি চারের পাশাপাশি ৩টি ছক্কা আসে তাঁর ব্যাট থেকে। ইয়ং আউট হওয়ার পর লাথামের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ফিলিপ্স। তিনি করেন ৩৯ বলে ৬১ রান। ৩টি চার এবং ৪টি ছয় মারেন ফিলিপ্স। ইয়ং-লাথামের চতুর্থ উইকেটের জুটিতে ওঠে ১১৮ রান। আর লাথাম-ফিলিপ্সের পঞ্চম উইকেটের জুটিতে ওঠে ১২৫ রান। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই জুটিই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে চালকের আসনে বসায় নিউ জ়িল্যান্ডকে।
যে বোলারদের উপর ভরসা করে রিজ়ওয়ান নিউজ়িল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের দক্ষতার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। শাহিন ১০ ওভারে খরচ করলেন ৬৮ রান, উইকেট পেলেন না। নাসিম ২ উইকেট পেলেও ১০ ওভারে দিলেন ৬৩ রান। রউফ ২ উইকেট নিলেন ১০ ওভারে ৮৩ রান দিয়ে। বরং ভাল বল করলেন আবরার আহমেদ। ৪৭ রানে ১ উইকেট তাঁর। নিউজ়িল্যান্ডের ইনিংসে প্রথম ধাক্কাও দেন তিনি। ফিল্ডিংয়েও দাগ কাটতে পারেননি পাকিস্তানের ক্রিকেটারেরা।
রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের মন্থর ব্যাটিং আরও বাড়িয়ে দেয়। তার উপর ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পাওয়ায় ওপেন করতে পারেননি ফখর জামান। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমেও অস্বস্তিতে ছিলেন তিনি। তাঁর পরিবর্তে বাবরের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন সাউদ শাকিল। তিনি করেন ১৯ বলে ৬ রান। তিন নম্বরে নেমে রিজ়ওয়ানও পরিস্থিতি বদলাতে পারলেন না। পাক অধিনায়ক বলে ৩ করলেন। ফখর করলেন ৪১ বলে ২৪। তবে ২২ গজের এক প্রান্ত আগলে ছিলেন বাবর। ফর্মে না থাকা প্রাক্তন অধিনায়কও দ্রুত রান তুলতে পারলেন না। তাঁর ব্যাট থেকে ৬৪ রানের ইনিংস এল ঠিকই, তবে খরচ করলেন ৯০ বল।লেন ৬টি চার এবং ১টি ছয়। একমাত্র সলমন আগার মধ্যে পাল্টা লড়াইয়ের চেষ্টা দেখা গেল ৬টি চার এবং ১টি ছয়ের সাহায্যে ২৮ বলে ৪২ রানের আগ্রাসী ইনিংস খেললেও লাভ হল না পাকিস্তানের। কারণ শুরুর দিকের ব্যাটারদের মন্থর ব্যাটিংয়ে ততক্ষণে পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দলকে ভরসা দিতে পারলেন না তায়াব তাহিরও (১)। শেষ দিকে কিছুটা লড়াই করলেন খুশদিল শাহ এবং শাহিন। তাঁদের লড়াই দর্শক মনোরঞ্জনের বেশি কিছু করতে পারেনি। ৪৯ বলে ৬৯ রান করলেন খুশদিল। ১০টি চার এবং ১টি ছয় মার তিনি। খুশদিল আউট হতেই পাকিস্তানের সব আশা শেষ হয়ে যায়। শেষ দিকে সাধ্যমতো লড়াই করলেন নাসিম (১৩) এবং রউফ (১৯)।
নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সফলতম বোলার উইল ও’রোর্ক। তিনি ৪৭ রানে ৩টি উইকেট নিয়েছেন। স্যান্টনার ৬৬ রানে ৩টি উইকেট নিয়েছেন। ম্যাট হেনরি ২৫ রানে ২টি উইকেট পেয়েছেন। মিচেল ব্রেসওয়েল এবং নাথান স্মিথ ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।