৩৫০ বছর ধরে নন্দীর অপেক্ষার অবসান হলো !জ্ঞানব্যাপী মসজিদে খোঁজ মিললো শিবলিঙ্গের ! মসজিদ সিল করার নির্দেশ আদালতের ।
নন্দী হলেন দেবতা শিবের বাহন। শিবমন্দিরের সামনে নন্দীর মূর্তি থাকে,শিবের পূজার সময় নন্দীর ও পূজাও করতে হয়। শিবমন্দিরেই শিবমূর্তির ডান পাশে শিবের দিকে তাকিয়ে থাকা একটি ষাঁড়ের মূর্তি নন্দীকে স্থাপন করা হয়। এই জ্ঞানব্যাপী মসজিদের দিকে তাকিয়ে থাকা নন্দীর মূর্তিটিই সন্দেহের উদ্রেক করে যে জ্ঞানব্যাপী মসজিদটি আগে মন্দির ছিল.,যা পরবর্তীতে মসজিদে রূপান্তরিত কর হয়।তা আজ প্রমাণ হলো জ্ঞানব্যাপী মসজিদের(GYANVAPI MOSQUE) একটি কুয়ার ভেতরে শিবলিঙ্গ পাওয়ার পর।ঐতিহাসিক ঘটনা সূত্রে জানা যায় মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব হিন্দুদের ধর্মীয় নগরী বেনারস এর নাম পাল্টে মুহাম্মদাবাদ করেছিলেন। তিনি হিন্দুদের তিনটি পবিত্র মন্দির, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, কেশব দেও মন্দির এবং সোমনাথ মন্দির ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব যখন কাশী আক্রমণ করেন তখন তার সৈন্যরা জ্ঞানব্যাপী চত্বরে মন্দিরটি গুঁড়িয়ে দেয় ,কিন্ত এই নন্দীকে কোনভাবেই ভাঙতে না পেরে এভাবেই ফেলেই চলে যায়। অবশেষে এই নন্দীর ইঙ্গিতকে লক্ষ্য করে কোর্টের নির্দেশে আরকোলোজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় জ্ঞানব্যাপী মসজিদের কুয়ার ভেতরে শিবলিঙ্গ পাওয়া যায় ,যা জ্ঞানব্যাপী মসজিদের চত্বরের ভেতরে অবস্থিত।
এদিকে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদে (GYANVAPI MOSQUE) শিবলিঙ্গ পাওয়ার দাবির পর সেই জায়গা সিল করার নির্দেশ জারি করেছে আদালত। বারাণসী আদালত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছে যে, শিবলিঙ্গটি যেখানে প্রাপ্ত হয়েছে সেই স্থানটি সিল করে দেওয়ার এবং সেখানে কাউকে যেতে না দেওয়ার। এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন ও সিআরপিএফকে।
আদালত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দায়িত্বও নির্ধারণ করেছেন। বারাণসী আদালত তার আদেশে বলেছে, ‘জেলা আধিকারিক, পুলিশ কমিশনার এবং সিআরপিএফ কমান্ড্যান্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে উপরের সমস্ত আধিকারিকরা যে জায়গাটি সিল করা হয়েছে তার সুরক্ষার জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন।
বারাণসীর জ্ঞানবাপি মসজিদে সার্ভে শেষ হয়েছে, কিন্তু দাবি নিয়ে ঝড় উঠেছে। তৃতীয় ও শেষ দিনে সমীক্ষার কাজ শেষ করে দল বেরিয়ে আসতেই হিন্দু দলগুলো শিবলিঙ্গ পেয়েছে বলে দাবি করতে শুরু করে। হিন্দু পক্ষের মতে, মসজিদের কুয়োর জল নিষ্কাশনের সঙ্গে সঙ্গে সবাই আনন্দিত হয়েছিল, কারণ সেখানে ১২.৮ ফুট ব্যাসের একটি শিবলিঙ্গ ছিল। বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ সমীক্ষা চলাকালীন, হিন্দু পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে সোমবার নন্দীর সামনে প্রায় ১২ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে। জরিপের কাজ এখন শেষ হয়েছে এবং আগামিকাল অর্থাৎ ১৭ মে টিমের পক্ষ থেকে রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হবে। এখানে আজ পাওয়া শিবলিঙ্গ সংরক্ষণ করতে আইনজীবীদের দল আদালতে পৌঁছেছে।
হিন্দু পক্ষ শিবলিঙ্গের পাওয়ার বিষয়টিতে খুশি , অন্যদিকে মুসলিম পক্ষ সরাসরি দাবি অস্বীকার করছিল। মুসলিম পক্ষের দাবি, ভেতরে কিছুই পাওয়া যায়নি, যা হিন্দু পক্ষ দাবি করছে। একই সময়ে, কোর্ট কমিশনার অজয় কুমার মিশ্র শিবলিঙ্গের বিষয়ে নীরবতা পালন করেন, আদালতের নির্দেশিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।আদালত তার আদেশে শিবলিঙ্গের চারপাশে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে, অর্থাৎ এখানে কেউ আসা-যাওয়া করতে পারবে না। এর পরে, কাশীর ডিএম কৌশল রাজ শর্মা এখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।
আদালতের কমিশনার অজয় কুমার মিশ্র আগামীকাল সমীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এর পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবে জ্ঞানবাপেী সত্যতা কী? শিবলিঙ্গ পাওয়া গেল নাকি? বেসমেন্টে কি প্রমাণ পাওয়া গেল? গম্বুজের ভিডিওগ্রাফি কী পাওয়া গিয়েছে ?
উল্লেখ্য জ্ঞানবাপী মসজিদ (GYANVAPI MOSQUE) বিতর্কের সূত্রপাত সাম্প্রতিক নয়, অতীতেও উঠে এসেছে। ১৯৩৬ সালে বারাণসী জেলা আদালতে প্রথম আবেদনটি দায়ের করা হয়েছিল। ১৯৩৭ সালে, আদালত বিতর্কিত স্থানে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়। ১৯৯১ সালে, স্বয়ম্ভু বিশ্বেশ্বর নাথ মন্দিরের তরফে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে মসজিদটি মন্দিরের জায়গায় নির্মিত হয়েছিল।
এদিকে আসাদুদ্দিন ওয়েসি এর বিরোধিতা করে বলেন যে তিনি বাবরি মসজিদের পরে আরও একটি মসজিদ হারাতে চান না। ওয়াইসি বলেন, ‘এটি স্পষ্ট ভাবে আইনের লঙ্ঘন। আমি আশা করি অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এবং মসজিদ কমিটি সুপ্রিম কোর্টে যাবে। আমি একটি বাবরি মসজিদ হারিয়েছি এবং আমি আরও একটি মসজিদ হারাতে চাই না।’