লোকসভায় হানাকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড ললিত ঝা গ্রেফতার হতেই জোরালো হলো বাংলা যোগ।
লোকসভায় হানা দেওয়া কাণ্ডে জোরালো হলো বাংলা যোগ।ঘটনার মূল চক্রী ললিত ঝা গ্রেফতার হওয়ার পর একে একে বের হয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সংসদে স্প্রে অ্যাটাক কাণ্ডে প্রথমে যে চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাঁদের সকলের মোবাইল ফোন ছিল এক জনের কাছে। তিনি আর কেউ নন, গোটা ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ললিত ঝা। দিল্লির থানায় গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে যিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও জোরালো হচ্ছে বঙ্গ যোগ। বড় বাজারের পর কলকাতার বাগুইআটিতে আরও এক ডেরার হদিশ ললিত ঝার। গত তিন বছর ধরে ললিত তাঁর বাবা-মা-ছোট ভাইকে নিয়ে বাগুইআটির একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
ললিত ঝার নাম প্রকাশ্যে আসতেই তাঁর বাগুইআটির ভাড়া বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন এখানে ললিত বা তার পরিবারের ব্যবহারে কোনও সন্দেহজনক কিছু দেখতে পাননি তাঁরা। বাগুইআটির বাড়ি থেকেই থেকেই গৃহশিক্ষকরতা করতেন ললিত। তাঁর ভাই বড়বাজারে ইলেকট্রিকের দোকানে কাজ করত।ললিত এমএ পাস করেও দীর্ঘদিন চাকরি পাননি । সেকারণে প্রায়ই তাঁর মা এই নিয়ে দুঃখ করতেন। যথেষ্ট ভদ্র পরিবার ছিল তাঁদের।
লোকসভায় হামলার তিন দিন আগে অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর কোলকাতা ছাড়ে ললিত ঝা। সেদিনই তাঁর মা-বাবা-ভাই বিহারে রওনা হয়ে গিয়েছিলেন । প্রতিবছরই শীতকালে তাঁরা বিহারে যান ২ মাসের জন্য,সে অনুযায়ী এবছরও বাবা দেবানন্দ ঝাঁ স্ত্রী এবং পুত্রকে নিয়ে বিহারে চলে যান।পরিবারের বাকি সদস্যদের ইতিমধ্যেই পুলিশ খবর দিয়েছে।
গতকাল ললিত দিল্লিতে আত্মসমর্পণ করেন এবং তাঁকে গ্রেফতার করার পর তাঁর আরও ২ বন্ধু মহেশ এবং কৈলাশকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের জেরা করে একাধিক তথ্য জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশকে ললিত জানিয়েছে, সংসদ হানার ঘটনাটির ভিডিয়ো তিনি রেকর্ড করেছিলেন। তারপর সেটি ইনস্টাগ্রামে আপলোড করেন এবং পাঠিয়ে দেন কলকাতার একটি এনজিওতে।ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে যাতে সর্বাধিক প্রচার পায়, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি।
ঘটনার পর দিল্লি থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দেন ললিত। এরপর সোজা চলে যান রাজস্থানের নাগৌরে। সেখানে তাঁর দুই বন্ধু ছিলেন। তাঁদের কাছেই আশ্রয় নিয়েছিলেন সংসদ হানার মাস্টারমাইন্ড । তবে ফের দিল্লি ফিরে আসেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ললিত দিল্লিতে আসেন,সঙ্গে মহেশ নামের আরও এক যুবক ছিলেন। কর্তব্যপথ থানায় গিয়ে ললিত আত্মসমর্পণ করেন।
এরপর কর্তব্যপথ থানার পুলিশ ললিতকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারাই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পুলিশ জানিয়েছে, ললিত নিজে সহ বাকি চার জনের মোবাইল পুড়িয়ে ফেলার যে দাবি করেছেন, তা কতটা সত্য, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।কেন তিনি আত্মসমর্পণ করলেন এখনো রয়েছে ধোঁয়াশার মধ্যে।
ইতিমধ্যেই নীলাক্ষ আইচের সঙ্গে ললিত ঝাঁর যোগ পেয়েছে পুলিশ। নীলাক্ষ আইচ বিধাননগর কলেজের ছাত্র। ললিত সংসদে স্প্রে অ্যাটাকের ভিডিও তুলে প্রথমে নীলাক্ষকে পাঠিয়েছিল। সেই সূত্র ধরে নীলাক্ষকে জেরা করছে দিল্লি পুলিশ। জানা গিয়েছে গত ১ বছর ধরে এই হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল। যাতে সংসদের সুরক্ষা বলয় আটকে না যায় সেকরণে বিশেষ ধরনের জুতো পরে বিজেপি সাংসদের পাস নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন মনোরঞ্জন এবং তার সহযোগী। ললিত পালানোর সময় সবার মোবাইন নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ধরা পড়ার আগে সেই মোবাইল ফোন পুড়িয়ে ফেলে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেন ললিত।
সকলকে জেরা করছে দিল্লি পুলিশ।এই ঘটনার সাথে আরো কোনো বড় জঙ্গি চক্রের যোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল।