প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA)-লাগু করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার !
প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA)-এর ধারা তৈরি করে ফেলতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার । যাতে ভোট ঘোষণার আগেই ওই আইনের মাধ্যমে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম দেশগুলি থেকে ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব প্রদান শুরু করা সম্ভব হয়। সূত্রের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওই নাগরিকত্ব প্রদানের কাজ শুরুর পক্ষপাতী। বিরোধীদের বক্তব্য, ভোটের আগে ধর্মীয় মেরুকরণকে ‘অস্ত্র’ করতেই CAA নিয়ে এ ভাবে সক্রিয় বিজেপি ।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, স্বভাবতই এ নিয়ে সরগরম এ রাজ্য। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, সিএএ নিয়ে দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করছে বিজেপি। আর সিপিএমের(CPM) বক্তব্য, ভোটের আগে কাগজ নিয়ে একটা হৈ চৈ তৈরি করতে চাইছে পদ্ম শিবির। বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপি বলছে, মানুষ এই আইন গ্রহণ করেছেন।
২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার দিল্লির আসন দখল করেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) আইন পাশ করে মোদী সরকার। ওই আইনানুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশ থেকে যদি কোনও ধর্মীয় সংখ্যালঘু (যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সি ও খ্রিস্টান) উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আসেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের আশ্রয় দেবে ভারত। ওই তালিকায় মুসলিমদের নাম নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পথে নামে একাধিক সংখ্যালঘু সংগঠন ও হিন্দু বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন গুলো যেমন তৃণমূল কংগ্রেস ,জাতীয় কংগ্রেস । যে বিরোধের কারণে সে সময়ে ওই আইন রূপায়ণ থেকে পিছিয়ে গিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। তার পরে চার বছর কেটে গেলেও, ওই আইনের ধারা বা রুলস এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার।
পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে নাগরিকত্বের দাবিতে সরব বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু মতুয়া সমাজ। ২০১৯ সালে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোকসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া সমাজের ঢালাও সমর্থন পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু মাঝের চার বছরে CAA প্রশ্নে কার্যত হাত গুটিয়ে থাকায় ক্ষুব্ধ মতুয়াদের একটা বড় অংশ। গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি শীর্ষ সূত্র থেকে দাবি করা হয়, খুব দ্রুত ওই আইনের ধারা তৈরি করা হবে। আগামী ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই ওই ধারা তৈরি হয়ে যাবে। যাতে ভোট ঘোষণার আগে অন্তত একজন মতুয়াকে নাগরিকত্ব দেওয়া যায়। তাতে মতুয়া সমাজকে একটা বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়।
বিরোধীদের মতে, গোটা তৎপরতাটাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে। ভোট শেষ হলেই তাতে ভাঁটা পড়বে। তা ছাড়া ধর্মের ভিত্তিতে কী ভাবে কাউকে নাগরকিত্ব দেওয়া সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হিন্দু বিরোধী নেতারা।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন, বাংলায় এই আইন কার্যকর হবে না। বাংলায় বসবাসকারীরা ইতিমধ্যেই নাগরিক। ফলে এই আইনের কোনও প্রয়োজন নেই। হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিভেদ উস্কে দিতেই ওই পদক্ষেপ।
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “CAA আটকাতে আদালতে যাক। ক্ষমতা থাকলে আটকে দেখাক। মানুষ সমস্ত প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে এই আইন গ্রহণ করেছেন। তৃণমূলের যে সব কর্মী সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকেন, তাঁরা এই আইনকে স্বাগত জানান।