তৃণমূলী বিচারক বনাম জনগণের বিচারকের সংঘাত থামাতে আসরে নামলেন সুপ্রীমকোর্ট !সিঙ্গল, ডিভিশন সব বেঞ্চে বিচার স্থগিত!
হাইকোর্টের ইতিহাসে বেনজির সংঘাতে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের সংঘাত নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করা হয়েছে।কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেনজির সংঘাত নিয়ে শনিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। বিষয়টি শোনার জন্য পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে শীর্ষ আদালত।
গত ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টে যা ঘটে, তা নিয়ে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়। বিশেষ বেঞ্চে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ছিলেন। এজলাসে ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানি। রাজ্য ও অভিষেক ব্যানার্জীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে আইনজীবী কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি।
শুনানি চলাকালীন এবার রাজ্য সরকারকে নোটিস ধরাল সুপ্রিম কোর্ট। মেডিক্যাল দুর্নীতি মামলার বিচারপ্রক্রিয়ার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশও দেওয়া হল। স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে সিবিআই তদন্তের উপরও। সোমবার শীর্ষ আদালতে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। গোড়াতেই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়ে দেন, আপাতত হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে (Calcutta High Court)। আপাতত এ নিয়ে কোনও শুনানি হবে না হাইকোর্টে। পাশাপাশি, বাকি যাঁদের বক্তব্য শোনার কথা রয়েছে, তা সোমবার শোনা হবে। অর্থাৎ এফআইআর দায়ের করে CBI-কে যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, তাতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হল। পাশাপাশি, ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেন যে CBI তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে, তার উপরও স্থগিতাদেশ এল। (Supreme Court)
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলায় যে নির্দেশ দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে মামলার (SLP) আবেদন জানায় রাজ্য। সুপ্রিম কোর্ট সেই অনুমতিও দিয়েছে। মামলাটি করা হয়েছে রাজ্যের তরফে।অভিষেকের আইনজীবী সিঙ্ঘভি আদালতে জানান, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর অনেক নির্দেশেই অভিষেকের নাম টেনে আনেন। তাই তাঁর মক্কেলের বক্তব্যও শোনা হোক। লিখিত আকারে বক্তব্য জানাতে চান অভিষেক।অভিষেকের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারপতি জানান, সোমবার এই মামলার শুনানি যখন হবে, তখন তাঁর বক্তব্য শোনা হবে।
প্রসঙ্গত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশনামায় উল্লেখ করেছিলেন, বড়দিনের ছুটির আগে বিচারপতি সেন তাঁর চেম্বারে বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে কে ডেকে পাঠান। সেখানে তিনি রাজনৈতিক নেতার মতো বিচারপতি সিংহকে নির্দেশ দেন।বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বিচারপতি সেন বিচারপতি সিংহকে বলেছিলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রয়েছে। তাঁকে বিরক্ত করা চলবে না।
এ ছাড়া, বিচারপতি সেন বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসের ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ বন্ধ করতে হবে বলে জানান। নিয়োগ দুর্নীতির দু’টি মামলা খারিজ করতে হবে বলেও নাকি তিনি বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে বলেছিলেন।এ প্রসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, বিচারপতি সেন ব্যক্তিগত স্বার্থে ওই সব নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তা খারিজ করে সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেন তিনি।
শুধু আদেশ দিয়েই নয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, কেন বদলির নির্দেশ সত্ত্বেও বিচারপতি সেনের বদলি কার্যকর হচ্ছে না, নেপথ্যে কার হাত রয়েছে।
উলেখ্য বৃহস্পতিবার দুই বিচারপতির মধ্যে দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দেওয়ার পর দেখা যায়, বিচারপতি সৌমেন সেনের বেঞ্চ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত মামলা। রাতে হাই কোর্ট নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেয়, আগামী সোমবার থেকে শিক্ষা সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে অন্য ডিভিশন বেঞ্চে।
বেনজির সংঘাত দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। শনিবার জরুরি ভিত্তিতে শুনানি ডাকা হয়। সেখানে মেডিক্যাল মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।