বিরাট জয় হিন্দুদের !জ্ঞানবাপী মসজিদে পূজো করার অনুমতি দিলো আদালত !
এখন থেকে জ্ঞানবাপী মসজিদে(Gyanvapi mosque) পুজো করতে পারবেন হিন্দুপক্ষ। বুধবার মসজিদের সিল করা বেসমেন্টে বা ‘ব্যাস কা তেয়খানা’ চত্বরে দেবতার উপাসনার অনুমতি দিল বারাণসীর আদালত। বুধবার শুনানির শুরুতেই জেলা প্রশাসনকে ভক্তদের পুজোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। শ্রী কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্টকে এর জন্য একজন পূজারিকে মনোনীত করতেও বলা হয়।
বারাণসী আদালতের নির্দেশ বেজায় খুশি হিন্দুপক্ষ। তাদের পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণু শংকর জৈন বলেন, ‘ব্যাস কা তেয়খানা’ চত্বরে ভক্তদের উপাসনার অনুমতি দিয়েছে আদালত। সাত দিনের মধ্যে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে জেলা প্রশাসনকে। এখন থেকে সকলেই পুজো করার অধিকার পেলেন। বিষ্ণু শংকর এই নির্দেশের সঙ্গে ১৯৮৩ সালে রামমন্দিরের দরজা খোলার আদালতের নির্দেশের তুলনা করেছেন।
গত ডিসেম্বর মাসে কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদের(Gyanvapi mosque) সমীক্ষার রিপোর্ট বারাণসীর জেলা আদালতে জমা দিয়েছিল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। রিপোর্টে বড়সড় তথ্য দিল পুরাতত্ব বিভাগ। মসজিদ তৈরির আগে সেখানে হিন্দু মন্দির ছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।কয়েকদিন আগে রিপোর্টের কপি সব পক্ষকে দেওয়া হবে বলে বারাণসীর আদালতের তরফে জানানো হয়েছিল।
সেই নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রিপোর্টের কপি দেওয়া হয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলায় যুক্ত সবপক্ষের হাতে। মোট ৮৩৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ভারতের পুরাতত্ব বিভাগ। হিন্দু মন্দিরের স্থানে মসজিদটি তৈরি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন মামলাকারীদের আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন।
পুরাতত্ব বিভাগের সমীক্ষার রিপোর্টে,মসজিদ চত্বরে এমন ৩২টি জায়গা রয়েছে, যেখানে একটি মন্দির ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে।একস্থানে মহামুক্তি মণ্ডপের উল্লেখ করা হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের আগে সেখানে যে হিন্দু মন্দির ছিল, তা মহামুক্তি মণ্ডপই বড় প্রমাণ বলে মনে করেছেন সমীক্ষকরা। এখানেই শেষ নয়। সমীক্ষার সময় মসজিদ চত্বরে রুদ্র ও বিশ্বেশ্বরের তেলেগু এবং কন্নড় ভাষার শিলালিপি সহ বেশ কয়েকটি ভাঙা পাথর পাওয়া গেছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
এএসআইয়ের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, হনুমান, গণেশ এবং নন্দীর মতো মূর্তি জ্ঞানবাপীর অন্দরে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, অসম্পূর্ণ শিবলিঙ্গের অস্তিত্বও পাওয়া গিয়েছে। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম জ্ঞানবাপীতে পাওয়া বেশ কয়েকটি ছবিও তুলে ধরেছে। এই রিপোর্ট সামনে আসতেই সরব হিন্দু পক্ষ। তাদের তরফে বিষ্ণুশংকর জৈন দাবি করেন, জ্ঞানবাপী থেকে যে সব দেবদেবীর ভাঙা মূর্তি পাওয়া গিয়েছে, তাতেই প্রমাণ হয় যে পুরনো মন্দির ভেঙে তার উপরই মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।
পুরাতত্ব বিভাগের মতে, ১৬৬৯ সালে ২ সেপ্টেম্বর আদি বিশ্বেশ্বর মন্দিরটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল। মন্দিরের স্তম্ভগুলি পরে মসজিদ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। মসজিদের বেসমেন্ট থেকে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে সরকারি সংস্থাটি। এই সব বিষয়গুলিই প্রমাণ করে যে ১৭ শতাব্দীতে মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলেই মন্দির ভেঙে মসজিদ করা হয়েছিল।
জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটি কী বলছে?জ্ঞানবাপীর (Gyanvapi mosque
)সমীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন মসজিদ কমিটির সদস্যরা। এখনই কোনও মন্তব্য করতে নারাদ তাঁরা। রিপোর্ট পুরো পড়ার পরেই প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।যদিও এএসআইয়ের রিপোর্টকেই চূড়ান্ত বলে ধরে নিতে রাজি নয় মুসলিম পক্ষ। বরং তারা এই রিপোর্ট নিয়ে সন্দীহান। অঞ্জুমান আঞ্জামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ(Gyanvapi mosque) কমিটির তরফে আখলাখ আহমেদ দাবি করেন, এর আগে অ্যাডভোকেট কমিশনের যা পর্যবেক্ষণ ছিল, এএসআই তার চেয়ে নতুন কিছুই পায়নি। শুধু নতুন করে সমস্ত মাপঝোপের বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে মাত্র। মসজিদ কমিটির সম্পাদক মহম্মদ ইয়াসিনের দাবি, “এটা একটা রিপোর্টমাত্র। কোনও চূড়ান্ত রায় নয়। নানা ধরনেরই রিপোর্টই আছে। তাই এএসআই সমীক্ষার রিপোর্টই যে চূড়ান্ত, তা নয়।” পাশাপাশি তিনি এও জানান, মসজিদ চত্বরে এএসআই সমীক্ষার অনুমতি দিয়ে ১৯৯১ সালের ‘ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা আইন’ লঙ্ঘন করা হয়েছে কি না, সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের সেই আবেদনের মামলা চলছে। শুনানিতে নিজেদের বক্তব্য জানাবে মসজিদ কমিটি।
পুরাতত্ব বিভাগের রিপোর্ট দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মামলাকারী সীতা সাহু, রেখা পাঠক, লক্ষ্মী দেবি এবং মঞ্জু ব্যাস। মন্দিরের উপর মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে বলে যে দাবি তাঁরা করেছিলেন, রিপোর্টে তা প্রমাণিত হল বলে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে শীর্ঘই মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণের দাবি করেছেন চার মহিলা। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন।