যাঁরা বাংলার মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে,তাঁদের উল্টে সোজা করার কাজ করবে মোদী সরকার!হুঁশিয়ারি অমিত শাহের!
‘ভোট-পরবর্তী হিংসায় নিহত বিজেপি কর্মীদের খুনিদের পাতাল থেকে খুঁজে এনে জেলে পুরবে বিজেপি সরকার’, বর্ধমানের জনসভা থেকে এই ভাষায় হুঙ্কার দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি শুধু রামমন্দির ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপের মতো ইস্যুতেই নয়, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিভিন্ন ইস্যুতে সরাসরি আক্রমণ করেছেন। এছাড়াও, বর্ধমানের সভা থেকে শাহ বলেছেন যে, এ রাজ্যে সিএএ কার্যকর করা হবে।
এই বারের লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান পূর্ব থেকে হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকারকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তাঁর সমর্থনে মেমারি বিধানসভা এলাকায় রসুলপুরে সভা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবারের সভায় তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকারকে ‘অলআউট’ আক্রমণ করেছেন। সেখানে তিনি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর বাংলায় ঘটে যাওয়া হিংসার ঘটনাকে টেনে এনেছেন।
ভোটের পরের হিংসার প্রসঙ্গ তুলে ধরতে গিয়ে অমিত শাহ প্রথমেই কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন। তিনি সন্দীপ ঘোষ, সুশীল মণ্ডল, সুখদেব প্রামাণিক, রবিন পাল, বলরাম মাঝি, ভাদু দাস সহ বেশ কিছু বিজেপি কর্মীর কথা বলেন। শাহের দাবি, এঁরা সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুন্ডাদের হাতে নিহত হয়েছেন। এরপর তিনি হুমকি দেন, ‘‘আমি আজ বলে যাচ্ছি, যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, আমাদের সরকার গঠনের পর তাদের পাতাল থেকেও খুঁজে বের করে জেলে পাঠাবে বিজেপি।’’
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর, রাজ্য জুড়ে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ নামক খুন, ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠে আসে। বিজেপি অভিযোগ করে যে, এই হিংসার শিকার হয়ে তাদের অনেক কর্মী মারা গেছেন। তারা তৃণমূল সমর্থিত দুষ্কৃতীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে। বিজেপির দাবি অনুযায়ী, সিবিআই এই ঘটনাগুলির তদন্ত করা উচিত। এর ফলে, কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয় এবং হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। রাজ্য সরকার এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রাখে।
সিবিআই গত আড়াই বছর ধরে এই মামলার তদন্ত করে চলেছে। এই মামলায় জড়িত বহু ব্যক্তিকে তারা গ্রেফতার করেছে এবং চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের পরিবেশেও কেন্দ্রীয় এজেন্সি একুশের ভোট-পরবর্তী মামলার তদন্ত অব্যাহত রেখেছে এবং সাক্ষীদের জেরা করছে। সিবিআই এই মামলার তদন্তে বেশ সক্রিয় বলে মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় ভোটপ্রচারে এসে শাহ ভোট-পরবর্তী হিংসার প্রসঙ্গ তুলেছেন।
মঙ্গলবারের সভায় ভোট-পরবর্তী হিংসার প্রসঙ্গ ছাড়াও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর উপর একাধিক ইস্যুতে আক্রমণ করেছেন শাহ। তিনি বলেন, “বিজেপি সরকার অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করেছে। ৭০ বছর ধরে কংগ্রেস, তৃণমূল, কমিউনিস্টরা এই রামমন্দির ইস্যুকে ঝুলিয়ে রেখেছিল। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর রামমন্দির নির্মাণ করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মমতাদি ও ভাইপোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তাঁরা যাননি।” এরপর তিনি সিএএ নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং স্পষ্ট করে দেন যে বাংলায় সিএএ কার্যকর হবেই ।
অমিত শাহ একই সঙ্গে বলেন, “মোদীজি বাংলার উন্নতির জন্য ১০ লক্ষ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা কোথায় গেল? যারা বাংলার জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, মোদী সরকার তাদের সোজা করে দেবে।” এছাড়াও, লোকসভায় বাংলা থেকে ৩০ আসন জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।