সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামী প্রতাপচন্দ্র দে-র বিরুদ্ধে ওঠা মামলাটি খারিজ করেছে। একই সাথে, শীর্ষ আদালত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এফআইআর দায়ের করা থেকে রাজ্যকে বিরত থাকতে বলেছে। এই সিদ্ধান্তে নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকার কিছুটা প্রভাবিত হয়েছে।
গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়েছিল। আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, “এফআইআর দায়ের করে রাজনীতি করবেন না। চার্জশিট ইতিমধ্যে দাখিল হয়ে গেছে, আইনকে তার নিজস্ব পথে চলতে দিন।”
বিচারপতি সিংহের স্বামীর বিরুদ্ধে অপরাধের একটি মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী। এক ৬৪ বছর বয়সী বিধবা ও তাঁর মেয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে, সুপ্রিম কোর্ট সিআইডি তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে, তারা জানায় যে এই মামলায় কোনো বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। ডিসেম্বরে, সুপ্রিম কোর্ট আবার জানায় যে পুলিশ আইন মেনে পদক্ষেপ নিতে পারবে।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি একটি পারিবারিক মামলার তদন্তে অনুচিত প্রভাব খাটিয়েছেন। একটি বিধবা এবং তাঁর মেয়ের অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং একাধিক বার তাদের হুমকি দিয়েছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তবে, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলাগুলি খারিজ করে দিয়েছে এবং রাজ্যকে এফআইআর নিয়ে রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
একটি জমির বিষয়ে ৬৪ বছর বয়সী এক বিধবার সাথে তার কিছু আত্মীয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। বিষয়টি আদালতে গড়ায়। আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেন যে, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করতে তার বাবার বাড়ি থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে দাদা এবং অন্যান্য আত্মীয়দের দ্বারা। তাকে বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি তার আইনজীবী আদালতে জানান, তার মক্কেলকে মারধর করা হয়েছে, যার প্রমাণ সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আছে। এই প্রেক্ষাপটে, ওই বৃদ্ধা তার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলা করেন।
বিধবা অভিযোগ করেছেন যে, বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এবং বিচারপতি সিংহের স্বামী অন্যায্যভাবে তদন্তকারীদের প্রভাবিত করেছেন। তার দাবি, দুটি মামলার তদন্তে বাধা দেওয়ার জন্য তিনি সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বিধবার আবেদন ছিল যে, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেবে যাতে দুটি ফৌজদারি অভিযোগের তদন্ত আইনজীবী বা তার বিচারপতি স্ত্রীর প্রভাব ছাড়াই সঠিকভাবে হয়। তিনি এই দুজনের বিরুদ্ধে তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার সেই মামলা খারিজ করা হয়েছে, আদালত মন্তব্য করেছে যে এফআইআরটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তবে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে যে, মামলার পুলিশের স্ট্যাটাস রিপোর্ট এবং চার্জশিট নিয়ে তারা কোনও মন্তব্য করছে না।
আদালতের নির্দেশে, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি বিচারপতির স্বামীর বিরুদ্ধে তদন্ত আরম্ভ করেছে। তাঁকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। এদিকে, বিচারপতি সিংহের আদালতে নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হয়েছে। তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয়ের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর একাধিক রায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েছে।