পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বুলেটের থেকে বেশি ব্য়ালটে গুরুত্ব দিয়েছে: প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার!
ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। আজ সোমবার, কিছু জায়গায় পুনর্নির্বাচন চলছে। আগামী মঙ্গলবার, ৪ মে, প্রকাশিত হবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল। ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে জানা যাবে আগামী পাঁচ বছর কার হাতে থাকবে দেশের শাসনভার। এর আগে, সাংবাদিকদের সাথে মুখোমুখি হন নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।
ভারত লোকসভা নির্বাচনে বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছে। কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ভারতে মোট ৬৪২ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬৪.২ কোটি ভোটার ভোট প্রদান করেছেন, যার মধ্যে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩১২ মিলিয়ন। নির্বাচনে ৬৮ হাজার ৭৬৩টি মনিটরিং টিম এবং ১৩৫টি বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছিল। এই সংখ্যা জি৭-এর সদস্য দেশগুলির মোট ভোটার সংখ্যার তুলনায় প্রায় দেড় কোটি গুণ বেশি।
এবারের পুনর্নির্বাচনের সংখ্যা গতবারের তুলনায় অনেক কম। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যেখানে ৫৪০টি পুনর্নির্বাচন হয়েছিল, এবার মাত্র ৩৯টি পুনর্নির্বাচন হবে। কমিশনার বলেছেন, ভোটকর্মীদের কাজের চাপ কমাতে এবার কম সংখ্যক পুনর্নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, গত চার দশকে এই প্রথম জম্মু ও কাশ্মীরে এত বেশি ভোট পড়েছে। কমিশনার বলেন, উপত্যকার জনগণ গণতন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে প্রস্তুত।
কমিশনার বলেন, “এবারের ভোটে কোনো হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। আপনারা অবগত আছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় আগে কী হতো। দুই বছরের নিরলস প্রস্তুতির পর, এবার শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, যা কোনোভাবেই সহজ কাজ ছিল না।”
কমিশনার উল্লেখ করেন, “২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই ঘটনা কমিশনের সক্রিয়তার প্রমাণ। আপনারা আগে দেখেছেন কীভাবে টাকা, মদ, শাড়ি বিলি করা হত। দক্ষিণ ভারতে টাকা বিলির প্রক্রিয়া আপনারা সাক্ষী থেকেছেন।”
কমিশন জানিয়েছে, হেলিকপ্টার তল্লাশির খবর প্রকাশিত হয়েছে। কমিশনের দাবি অনুযায়ী, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিষয় নয়, চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা কোনো প্রভাবশালী নেতার হেলিকপ্টারই হোক না কেন, সব হেলিকপ্টার তল্লাশি করা হয়েছে।
নির্বাচনী বিধিভঙ্গের ৪৯৫টি অভিযোগের মধ্যে ৯০টি সমাধান করা হয়েছে। ছয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের আধিকারিকদের বদলি করা হয়েছে।
গণনার বিষয়ে কমিশনার জানিয়েছেন, কখন এবং কী ঘটবে তা সব আগে থেকেই নির্ধারিত। পুরো প্রক্রিয়াটি সুনির্দিষ্ট ভাবে স্থির করা হয়েছে। কোনও ত্রুটির সম্ভাবনা নেই। সব কিছু একটি ঘড়ির মতো নিখুঁতভাবে কাজ করবে।
পশ্চিমবঙ্গে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের পরের হিংসার বিষয়ে কমিশনের মন্তব্য হল, সাত দফায় যেভাবে নির্বাচন আয়োজিত হয়েছে, তাতে কমিশন আশাবাদী যে জনগণ বুলেটের চেয়ে ব্যালটের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও দেবেন। তবে হিংসা ঘটলে, নির্বাচন বিধি প্রত্যাহারের পরেও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নীতি পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশ সহ কয়েকটি অন্যান্য জায়গায়ও প্রযোজ্য হবে।