মোদী গ্যারান্টি নয়,সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে বলেছিলো আরএসএস (RSS),শোনেনি বিজেপি!
লোকসভা ভোটে যতটা না ফর্মে ছিলো বিজেপি,ততটাই খারাপ ফল করেছে।আরএসএস (RSS) মনে করে যে, উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে নির্বাচনে বিজেপির সংগঠন কেন ব্যর্থ হয়েছে তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত।
গত দশ বছরে নরেন্দ্র মোদীর শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে আরএসএস এবং বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব বাড়ার অভিযোগ ওঠেছে। দুই সপ্তাহ আগে, বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বিজেপি অতীতে ছোট এবং অক্ষম ছিল। এখন পরিণত এবং সক্ষম। তাই বিজেপি এখন নিজে চলতে পারে।” এই মন্তব্য সঙ্ঘ নেতৃত্ব ভালোভাবে নেয়নি। এর ফলে দুই শিবিরের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়তে পারে বলে বিজেপির অনেক নেতা মনে করেন। অনেকের মতে, বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া আরএসএসের জন্য শাপে বর হয়েছে। এতে তারা বিজেপির উপর হারানো নিয়ন্ত্রণ কিছুটা ফিরে পাবে, বিশেষ করে সরকারি নীতি নির্ধারণে।
আসলে, নড্ডার বিদায় সন্নিকট। তাঁর সভাপতিত্বের মেয়াদ গত জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার পর জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এবার, ভোটে বিজেপির ফলাফল প্রত্যাশামতো না হওয়ায়, তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। সূত্র অনুযায়ী, পরবর্তী সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর।
সূত্রের মতে, এবারের নির্বাচনে সঙ্ঘ চেয়েছিল যে, মোদীর জনপ্রিয়তা এবং সরকারের জনমুখী প্রকল্পগুলি যেভাবে প্রান্তিক মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছে, সেই বিষয়গুলিকে প্রচারের মুখ্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হোক। জাতীয় সুরক্ষার মজবুতি প্রচারে অগ্রাধিকার পাক। কিন্তু বিজেপি প্রচারে ‘মোদী গ্যারান্টি’কে প্রাধান্য দেয়। একজন নেতার উপর ভিত্তি করে ‘চারশো পারের’ প্রচার অন্য শরিকদের কতটা আশ্বস্ত করেছে, তা নিয়ে সঙ্ঘ নেতারা সংশয় প্রকাশ করেছেন। এতে প্রচারের বিষয়ে দুই শিবিরের মধ্যে দূরত্ব বজায় থাকে।
ভোটের আগে দুর্নীতির অভিযোগপ্রাপ্ত নেতাদের বিজেপিতে যোগদান এবং তাঁদের প্রার্থী করা নিয়ে আরএসএসের গভীর আপত্তি ছিল। বিশেষত, মহারাষ্ট্রে অশোক চহ্বাণের দলে যোগদান এবং এনসিপির অজিত পওয়ারের সাথে জোট নিয়ে সঙ্ঘ কর্মীরা তৃণমূল স্তরে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। আরএসএসের আরেকটি উদ্বেগ ছিল যে ওই নেতারা সঙ্ঘের আদর্শ সম্পর্কে অবগত নন। এই আপত্তি সত্ত্বেও অগ্রাহ্য হয়েছে। আরএসএস আশা করছে, এবারের ফলাফলের পর ভবিষ্যতে দলে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের যোগদান কমবে। গত দশকে বিজেপি কর্মীদের প্রভাবে সঙ্ঘের কর্মীরা প্রান্তিক হয়ে পড়েছিলেন। বিরোধীদের মতে, এই কারণে এবারের নির্বাচনে সঙ্ঘের অধিকাংশ কর্মী নিষ্ক্রিয় ছিলেন, যার প্রভাব ভোটদানের হারে পড়েছে। মহারাষ্ট্র সহ উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলিতে ভোটদানের হার কমে গিয়েছে, অনেকেই ভোট দিতে বেরোননি। এঁদের বেশিরভাগই বিজেপির ভোটার। ফলে, সঙ্ঘ মনে করছে যে এই রাজ্যগুলিতে বিজেপির সংগঠনের ব্যর্থতা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা প্রয়োজন।
সঙ্ঘের নেতৃত্ব মনে করে যে, তাদের উদ্বেগ সত্ত্বেও বিজেপি নেতারা বেকারত্বের সমস্যাকে গুরুত্ব দেননি। বেকারত্ব এই বারের নির্বাচনে একটি প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে। ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্পের প্রতি ক্ষোভও ছিল। এই সব কারণে যুব সমাজের একাংশ দূরে সরে গেছে। আরএসএস মনে করে যে, ভবিষ্যতে রোজগার বৃদ্ধি নতুন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বর্তমানে বিজেপির একা সরকার গঠন অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে, শরিকদের সমর্থন ছাড়া। মোদীর শরিকদের সাথে সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে বিজেপির মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করেন, শরিকদের সাথে মিলে চলার ক্ষেত্রে নিতিন গডকড়ী হতে পারেন সেরা পছন্দ। তবে মোদীকে এই মুহূর্তে সরানো প্রায় অসম্ভব বলে তাঁরা জানেন।