ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হয়েও বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপে ৬ রানে পাকিস্তানকে হারাল ভারত।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক জরুরি ম্যাচে ভারত প্রথমে ব্যাট করে ১১৯ রান করে। পাকিস্তান সহজ লক্ষ্য পেলেও ম্যাচ জিততে ব্যর্থ হয়। ভারতীয় বোলারদের অসাধারণ বোলিংয়ে ১১৩ রানে তাদের ইনিংস শেষ হয়।
রবিবারের খেলা বৃষ্টির কারণে দেরি করে শুরু হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ম্যাচ আরম্ভ হয়। প্রথম ওভার শেষ হতেই পুনরায় বৃষ্টি নামে এবং খেলা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়। খেলা পুনরায় শুরু হলে বিরাট কোহলি (৩ বলে ৪ রান) দ্রুত আউট হয়ে যান। বল পিচে পড়ে সামান্য থমকে যায়, যা বিরাট আঁচ করতে পারেননি এবং ব্যাট চালিয়ে দিয়ে নাসিম শাহের বলে তিনি আউট হন।
রোহিত (১২ বলে ১৩ রানে) পরের ওভারে আউট হন, তাঁর উইকেটটি নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। বল থমকে যাওয়ায় ভারত অধিনায়ক আগেভাগেই ব্যাট চালিয়ে দেন। মাত্র ১৯ রানে ভারতের দুই সেরা ব্যাটার আউট হয়ে যাওয়ায়, অক্ষর পটেলকে ধাক্কা সামলানোর জন্য নামানো হয়। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে তিনি ১৮ বলে ২০ রান করেন। পাওয়ার প্লে-তে অক্ষর দলের ইনিংস সামলানোর চেষ্টা করেন, এবং ঋষভ পন্থ অন্য প্রান্ত থেকে আক্রমণ করেন।
পন্থ এবং অক্ষরের ব্যাটিংয়ের উপর ভর করে জুটি ৩৯ রান করে। ভারত ৫৮ রানে এসে তৃতীয় উইকেট হারায়। নাসিম শাহের বলে অক্ষর (১৮ বলে ২০ রান) বোল্ড হন। নাসিম সুইং করাচ্ছিলেন, কিন্তু অক্ষর সোজা বলে আউট হয়ে গেলেন। তিনি বলের লাইন ঠিকমতো বুঝতে পারেননি এবং সুইং হবে ভেবে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন। পাকিস্তানের তিন পেসার ইতিমধ্যেই বুঝে গিয়েছেন যে পিচ থেকে সুইং পাওয়া যাচ্ছে এবং তারা সেটা কাজে লাগাচ্ছিলেন। আমির যেভাবে বল সুইং করাচ্ছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল না যে তিনি অবসর থেকে ফিরে এসেছেন।
পন্থ সুইং সামলে ভারতকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। ৩ উইকেট হারিয়ে ভারত ৮৯ রান করেছিল। কিন্তু তারা ১১৯ রানে অলআউট হয়ে যায়। সূর্যকুমার যাদব ৮ বলে ৭ রান করেন এবং স্কুপ শট খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। হ্যারিস রউফের স্লোয়ার বলে ভুল শট খেলে সূর্য আউট হন এবং তারপর থেকে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়ে। শেষ ৬ উইকেট মাত্র ৩০ রানে হারায়।
শিবম দুবে (৩), হার্দিক পাণ্ড্য (৭), এবং রবীন্দ্র জাডেজা (০) খেলতে এসে দ্রুত আউট হয়ে গেলেন। তাঁরা ভারতের ইনিংসে কোনো অবদান রাখতে পারেননি। ঋষভ পন্থ ৩১ বলে ৪২ রান করেন, যা ভারতের স্কোরকে কিছুটা সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যায় ।
পাকিস্তানের পেস বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণেই ভারত কম রানে আটকা পড়ে। তারা ভারতের ৯টি উইকেট নেয়। একটি রান আউট ছিল। নাসিম শাহ এবং হ্যারিস রউফ প্রত্যেকে তিনটি করে উইকেট লাভ করেন, মহম্মদ আমির দুটি উইকেট নেন, এবং শাহিন শাহ আফ্রিদি একটি উইকেট পান। তাদের সুইং এবং গতির সামনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বিপাকে পড়েন।
মাত্র ১১৯ রানের পুঁজি নিয়ে যখন যশপ্রীত বুমরার প্রথম ওভারে দুবে ক্যাচ ফেলেন, তখন ভারতের হার প্রায় নিশ্চিত মনে হচ্ছিল। কিন্তু বুমরা এবং মহম্মদ সিরাজ হাল ছাড়তে রাজি ছিলেন না। রোহিত শর্মা এবং তাঁর দল জানতেন যে পাকিস্তানের দলে পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে, যা বাবর আজম এবং মহম্মদ রিজওয়ানের শট নির্বাচন থেকে স্পষ্ট ছিল। লক্ষ্য কম হলেও কেউ ইনিংস সামলানোর চেষ্টা করেনি, যা ভারতীয় বোলারদের জন্য সুযোগ হয়ে দাঁড়ায়।
বুমরা পাকিস্তানের প্রথম উইকেট নেন এবং রিজ়ওয়ানকে বোল্ড করেন। এই দুই উইকেট হারানোর ফলে পাকিস্তান চাপে পড়ে যায়। কোনও ব্যাটার ইনিংস শুরু করেও দলের জন্য ভরসা জোগাতে পারেনি। প্রতি বলে এক রান করেও পাকিস্তান জিততে পারেনি। পরিকল্পনার অভাবে পাকিস্তানকে পরাজয় মানতে হয়। বুমরা তিনটি, হার্দিক পাণ্ড্য দুটি, আরশদীপ সিংহ এবং অক্ষর পটেল প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নেন। ভারতীয় বোলাররা উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি রানও আটকে দেন।
রোহিতের নেতৃত্বের প্রশংসা অবশ্যই করা উচিত। তাঁর বোলারদের ব্যবহার করার কৌশল ভারতকে ম্যাচ জিততে সহায়তা করেছে। তিনি ১৯তম ওভারে বুমরাকে বল করানোর সিদ্ধান্ত নেন, যা খুবই ফলপ্রসূ হয়। বুমরা ওই ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন, যা ভারতের জয়ের পথ প্রশস্ত করে। শেষ ওভারে আরশদীপ পাকিস্তানের প্রয়োজনীয় ১৮ রানের মধ্যে ১১ রানের বেশি দেননি।