যোগীর উপর বুলডোজার চালাতে প্রস্তুত মোদি-শাহ! শুভেন্দুকেও সরানোর পরিকল্পনা?
উত্তরপ্রদেশে এইবার বিজেপি বড় হারের মুখোমুখি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির অবস্থা একই রকম হয়েছে। এই নির্বাচনে দলটি একা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। এর ফলে দলের অন্তর্গত ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই বিজেপি কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং দলীয় নেতাদের পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারে। মোদি-শাহ-নাড্ডা জুটি এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যদি জয় হয়, তাকে মোদীর ম্যাজিক বলা হয়, আর পরাজয় হলে তা স্থানীয় নেতৃত্বের দোষ বলে ধরা হয় – এই ধারণা গেরুয়া শিবিরে প্রচলিত। এর ফলে, বিজেপির আসন কমে গেলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগ সম্ভব।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল বারবার প্রচার করেছেন যে, নরেন্দ্র মোদি যদি বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসেন, তাহলে তিনি শুধু অবিজেপি নয়, বিজেপি শাসিত অনেক মুখ্যমন্ত্রীকেও সরিয়ে দেবেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, যিনি অর্ন্তবর্তী জামিনে মুক্ত, বলেছেন যে যোগী আদিত্যনাথ প্রথমে গদি হারাবেন। উত্তরপ্রদেশের লোকসভা ভোটে বিজেপির পরাজয়ের পর, এখন জেলবন্দি কেজরিওয়ালের মন্তব্যই পদ্ম শিবিরের মূল আলোচনা। দুই বছর আগের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পর, যোগীর নতুন ডাকনাম হয়েছে ‘বুলডোজার বাবা’। তাঁর প্রশাসন ছোটখাটো অন্যায়ের জন্যও অভিযুক্তের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিচ্ছে, যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা পর্যন্ত গড়েছে, কিন্তু যোগীকে টলানো যায়নি। লোকসভা ভোটের সময়েও যোগী প্রশাসনের বুলডোজার শাসন অব্যাহত ছিল।
বিজেপির অন্তর্গত খবর অনুযায়ী, কেজরিওয়ালের দাবি সত্যি হতে চলেছে যে, যোগীর মুখ্যমন্ত্রিত্ব মোদির বুলডোজারের ধাক্কায় শেষ হতে পারে। বিজেপি উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের প্রতিটিতে জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। প্রতিটি ভোটের দফা শেষে, রাজ্য বিজেপি এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী দলকে নিশ্চিত করেছিলেন যে সবকিছু দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। কিন্তু ফলাফল বিপরীত হয়েছে। গতবারের ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৬২টি আসন পেয়েছিল, কিন্তু এবার তা ৩৩টিতে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে, প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সমাজবাদী পার্টি ৩৭টি আসন লাভ করেছে। যোগীর বিরুদ্ধে দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এক বড় অংশের অভিযোগ হল, তিনি এসপি নেতা অখিলেশের নতুন জাত সমীকরণকে উপেক্ষা করেছেন। অখিলেশ যে পিডিএ সমীকরণ তৈরি করেছেন, অর্থাৎ পিছড়া বা ওবিসি (পি), দলিত বা তফসিলি জাতি (ডি), এবং অল্পসংখ্যক বা মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক (এ), তার মোকাবিলায় যোগী প্রশাসনিকভাবে কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। দলিত বা তফসিলি ভোটের বড় অংশ সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে, যার মধ্যে মায়াবতীর বিএসপি এবং বিজেপির ভোটও রয়েছে। অখিলেশের পিডিএ সমীকরণ এবারের ভোটে এতই সফল হয়েছে যে, অযোধ্যার অন্তর্গত ফৈজাবাদ লোকসভা আসনে বিজেপি পরাজিত হয়েছে।
যেখানে বিজেপির রাম রাজনীতির বিপরীতে অখিলেশের জাতিগত সমীকরণ অধিক প্রভাব ফেলেছে। উত্তরপ্রদেশে, মুখ্যমন্ত্রী যোগীর পাশাপাশি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দলীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা প্রধান দায়িত্বে ছিলেন। তবে প্রধান দায়িত্ব ছিল যোগীর উপর। বিশেষ করে প্রচণ্ড গরমের কারণে প্রথম দুই দফায় কম ভোট পড়া সত্ত্বেও, তাঁর প্রশাসন বুথে পানীয় জলের ব্যবস্থা করেনি এবং মানুষকে ভোটকেন্দ্রমুখী করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি। প্রায় এক কোটি পরিযায়ী শ্রমিকদেরও ভোটের সময় তাদের এলাকায় ফেরানোর জন্য যোগী প্রশাসন তৎপর হয়নি।
বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, মোদী ও শাহ জুটি আদিত্যনাথকে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। এছাড়া, কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতাদের পদ থেকে সরানো হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এর মধ্যে বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নামও উঠে এসেছে।
এই বার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ভালো ফল করতে পারেনি। সুকান্ত মজুমদার এবং দিলীপ ঘোষের মতো প্রার্থীরা নিজেদের কেন্দ্রে ব্যস্ত থাকায় অন্য কেন্দ্রে সময় দিতে পারেননি। প্রার্থী মনোনয়নে শুভেন্দু অধিকারীর মতামতকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গুরুত্ব দিয়েছে, এবং তাঁর পছন্দের প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দিলীপ ঘোষকে শুভেন্দুর আপত্তির কারণে মেদিনীপুর থেকে বর্ধমানে সরানো হয়েছে, এবং মেদিনীপুরে অগ্নিমিত্রা পলকে প্রার্থী করা হয়েছে। এই সব ঘটনায় অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা এবং বি এল সন্তোষ শুভেন্দুর উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন, এবং বিজেপি বাংলার নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।