কলকাতার বুকে শক্তি বৃদ্ধি বিজেপির!হেভিওয়েট বহু ওয়ার্ডে পিছিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস !
লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের পরাজিত করে বাংলায় আবার সবুজ ঝড় তুলেছে তৃণমূল। ২০১৯ সালের নির্বাচনের প্রভাব কাটিয়ে এবার তারা ২৯টি আসনে জয়লাভ করেছে। পূর্বে হারানো আসনগুলি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে পরাজিত করে সেই আসন প্রথমবারের মতো তৃণমূলের দখলে এসেছে। প্রাপ্ত ভোটের শতাংশও বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, ভোট পর্যালোচনা থেকে বোঝা গেছে যে ‘পদ্ম কাঁটা’ এখনও বিদ্ধ রয়েছে।
এইবার পদ্ম শিবিরের আসন সংখ্যা ১৮ থেকে কমে ১২ হয়েছে। লোকসভার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কলকাতা পুরসভায় বিজেপি বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। ১৪৪ ওয়ার্ডের কলকাতা পুরসভায়, যেখানে গত পুরভোটে মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে জয়লাভ করেছিল বিজেপি, সেখানে এবারের লোকসভা ভোটে ৪৫টি ওয়ার্ডে এগিয়ে আছে। অন্যদিকে, ২০২২ সালে কলকাতা পুরসভায় ১৩৪টি ওয়ার্ডে জয়ী হওয়া তৃণমূলের এবারের লিড কমে ৯৮টিতে নেমে এসেছে।
কলকাতার দুই লোকসভা আসনে তৃণমূল জিতলেও, অনেক ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। বেশ কিছু হেভিওয়েট কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে পিছিয়ে গেছে তৃণমূল। দক্ষিণ কলকাতার জেলা সভাপতি, মেয়র পারিষদ এবং তৃণমূল বিধায়ক দেবাশিস কুমারের ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডেও পিছিয়ে আছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন এবং রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং তাঁর মেয়ে পূজা পাঁজার ওয়ার্ডেও পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। পরেশ পালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড, অসীম কুমার বসুর ৭০ নম্বর ওয়ার্ড, সন্দীপরঞ্জন বক্সীর ৭২ নম্বর ওয়ার্ড, এবং বিশ্বরূপ দে-র ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। জুঁই বিশ্বাস, সুশান্ত ঘোষ, সুদীপ পোল্লে, সাধনা বসু, সুস্মিতা ভট্টাচার্যের ওয়ার্ডেও তৃণমূলের চেয়ে বিজেপি এগিয়ে আছে। সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়ের ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্ম ফুটেছে।
অন্যদিকে, উত্তর কলকাতার কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কাউন্সিলর মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। লোকসভা ভোটের ফলাফলেও বিজেপি এগিয়ে যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ মন্তব্য করেছেন, ‘তৃণমূল কাউন্সিলররা বেশিরভাগই তোলাবাজ এবং সাধারণ মানুষ তাদের পছন্দ করেন না। যে সব শহুরে মানুষ বিশ্ব এবং ভারতের খবর রাখেন, অর্থনৈতিকভাবে গ্রামের মানুষের চেয়ে এগিয়ে থাকেন, তাদের কেনা সহজ নয়। শহরাঞ্চল এবং শহরতলির এলাকায় বিজেপির ভোট বেশি পড়ে।’
সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য মন্তব্য করেন, ‘লোকসভার ভোট পুরভোটের ইস্যুতে হয়নি। যখন পুরভোট আসবে, তখন তা পুরসভার ইস্যুতেই হবে। বরানগরে ভোটলুঠের পরেও ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলাম, সেটা কেন ধরে রাখতে পারিনি?’
অন্যান্য ছবিতেও পরিবর্তন দেখা গেছে। কলকাতা পুরসভার বামেদের দখলে থাকা ১০৩ এবং ৯২ নম্বর ওয়ার্ডে এইবার তৃণমূল এগিয়ে গেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কাউন্সিলর এবং রাজ্য মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীর ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাম-কংগ্রেস জোট এগিয়ে রয়েছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, শনিবার কালীঘাটের বৈঠকে তৃণমূলনেত্রী উল্লেখ করেছেন যে বহুতল এলাকায় তৃণমূলের ভোট কমে গেছে। তিনি মনে করেন যে বিধানসভা নির্বাচনে এর পরিবর্তন হবে, এবং তিনি এই বিষয়ে বাড়তি নজর দেওয়ার কথাও বলেছেন।