কোচবিহারের তৃণমূলের জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবং অনন্ত মহারাজের সাক্ষাৎ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ অনন্ত মহারাজের সাক্ষাৎ কোচবিহার জেলার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা অনেকে লক্ষ্য করছেন। এই ঘটনায় কোচবিহার বিজেপির জেলানেতৃত্ব অগ্নিশর্মা। বিজেপির সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও অনন্ত কেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন, তা নিয়ে জেলার বিজেপি নেতারা প্রশ্ন তুলছেন।
ভোট-পরবর্তী ‘সন্ত্রাস’-এর অভিযোগে সোমবার কোচবিহার পরিদর্শন করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। এর আগে, শনিবার কলকাতায় দলের একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বৈঠক ছেড়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কোচবিহারে গিয়েছিলেন ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এই সব ঘটনার পরেই অনন্ত-মমতা বৈঠক নিয়ে কোচবিহার জেলার পদ্মশিবিরের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার আসনে অমিত শাহের ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিককে হারিয়ে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। উত্তরবঙ্গে বিজেপির কাছ থেকে এই আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। এবং সেখানেই তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিজেপির অনন্ত। এই ঘটনায় জেলার নেতা-বিধায়কেরা ক্রুদ্ধ এবং বিড়ম্বিত হয়ে রাজ্যনেতৃত্বের কাছে নালিশ জানিয়েছেন।
সোমবার উত্তরবঙ্গে রেল দুর্ঘটনা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। পরদিন সকালে কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেন তিনি। এরপর তিনি বিজেপি সাংসদ অনন্তের বাসভবনে যান। সেখানে অনন্ত নিজে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এই ঘটনা প্রকাশ পেতেই কোচবিহারের বিজেপি নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ও অনন্ত মহারাজের বৈঠকের পর আমাদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসে আক্রান্ত দলের কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন এই বৈঠক নিয়ে। তাঁরা বলছেন, অন্তর্ঘাত করে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছেন অনন্ত মহারাজ। তাই মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারে এসে তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়েছেন।” নিখিল আরও বলেন, “কর্মীদের তোলা প্রশ্নের কোনও উত্তর আমরা দিতে পারছি না। বিষয়টি আমি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে জানাচ্ছি। বৈঠক নিয়ে আমাদের মনের ক্ষোভও তাঁর কাছে তুলে ধরছি।” এক প্রবীণ নেতা বলেন, “অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভার সদস্য করা বিজেপির ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার পর তিনি কখনও জেলা কার্যালয়ে আসেননি, নেতা-কর্মীদের দুঃখকষ্টের সময় পাশে থাকেননি, এবং এ বারের ভোটে প্রচারেও নামেননি। তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করা যুক্তিসঙ্গত ছিল কি?”
কোচবিহারে বিজেপি প্রার্থী নিশীথের হয়ে প্রচারে না নামলেও অনন্তকে বিজেপির ‘তারকা’ প্রচারকদের তালিকায় রাখা হয়েছে। সোমবার বিজেপি সেই তালিকা প্রকাশ করে।
মনে ক্ষোভ থাকলেও তুফানগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক মালতী রাভা রায় এবং শীতলখুচির বিধায়ক বরেন বর্মণ প্রকাশ্যে কিছু জানাতে চাননি। তাঁরা বলেন, “এ বিষয়ে আমরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করব না। কিছু বলার থাকলে দলের অভ্যন্তরেই জানাব।” কোচবিহার বিজেপি সূত্রের খবর, অনন্ত-মমতা বৈঠক নিয়ে জেলানেতৃত্ব অসন্তুষ্ট। তবে কোচবিহার জেলা বিজেপির সভাপতি সুকুমার রায় এ বিষয়ে বলেন , রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই অনন্ত মহারাজের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি মহারাজের বাড়ি গিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই বিষয়টি তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে, এবং এতে রাজনীতির কোনো সংযোগ নেই।
রাজ্য বিজেপির এক সূত্র অনুযায়ী, ২০২৩ সালের রাজ্যসভা নির্বাচনে অনন্তকে প্রার্থী করার বিষয়ে রাজ্য বিজেপির প্রায় কোনো নেতাই সম্মতি প্রকাশ করেননি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একতরফা ভাবে অনন্তকে চাপিয়ে দিয়েছিলেন, উদ্দেশ্য ছিল রাজবংশী ভোট আকর্ষণ করা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠানোর পথ মসৃণ করেছেন। রাজ্য বিজেপি নেতারা মনে করছেন, অনন্ত মহারাজকে নিয়ে যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অন্দরে তৈরি হয়েছে, তার দায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এড়াতে পারেন না।