মোদীর সঙ্গে বৈঠকে এ বার ঐকমত্যে সমুদ্রপথের সহযোগিতা, ‘ভারত বিশ্বস্ত বন্ধু’, বললেন শেখ হাসিনা!
আজ শনিবার, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে শেখ হাসিনা ভারতে পৌঁছেছেন এই বৈঠকের জন্য।
গতকাল সন্ধ্যায়, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন। জয়শঙ্কর একটি সাক্ষাতের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে আমি উৎফুল্ল। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক কত ঘনিষ্ঠ ও চিরন্তন, এই সফর তার পরিচায়ক। তাঁর নেতৃত্বে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’
শনিবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সংক্রান্ত যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘ভারত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং বিশ্বস্ত বন্ধু।’’ এই বৈঠকে দু’দেশের রাষ্ট্রনেতা এবং প্রতিনিধিদের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রাঞ্চলে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা চুক্তি। মোদী এই প্রসঙ্গে হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘এই সমুদ্র সহযোগিতার মাধ্যমে নীল অর্থনীতির পথে দুই দেশ এক সঙ্গে চলবে।’’
আঞ্চলিক সমুদ্রপথের নিরাপত্তায় এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আগামী দিনে নয়াদিল্লি-ঢাকা মৈত্রীকে আরও নিবিড় করবে বলে মনে করছেন কূটনীতি বিশারদদের একাংশ। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে দুই রাষ্ট্রপ্রধান জানান, ভারত এবং বাংলাদেশ একটি সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিতে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। মোদী মন্তব্য করেন, ‘‘বাংলাদেশ আমাদের বৃহত্তম উন্নয়ন-সঙ্গী। তাদের স্বার্থকে ভারত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়।’’ অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা, রেল যোগাযোগ এবং পরমাণু গবেষণায় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে শনিবারের বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে। ‘সবুজ অংশীদারিত্ব’ নিয়েও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমন্ত্রণে, শুক্রবার শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রতিনিধিদল দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি পৌঁছেছেন। শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাদের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান ছিল। মোদী সেখানে হাসিনা এবং তার সফরসঙ্গীদের স্বাগত জানান। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর অশ্বারোহী দেহরক্ষী বাহিনী হাসিনার কনভয়কে ভবনের বাইরের ফটক থেকে ভিতরে নিয়ে যায়। এরপর ভারতীয় সেনার তিন শাখা তাদের জন্য আনুষ্ঠানিক ‘গার্ড অফ অনার’ প্রদান করে। রাষ্ট্রপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের পর, হাসিনা ও তার দল রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। তারপর হায়দরাবাদ হাউসে মোদী ও হাসিনার মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এই সফরে হাসিনার সঙ্গে এসেছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ‘অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ’ মহম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সলমন ফজলুর রহমান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, মুখ্য সচিব মহম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিঞা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, এবং সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামিম-সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা।