‘আরাবুল খুনের ষড়যন্ত্রে করছে ,খবর দেন অভিষেক’! আরাবুলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক বিধায়ক শওকত মোল্লা !
অপরাধের মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকা ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে এবার সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক এবং ভাঙড়ে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শওকত মোল্লা। প্রকাশ্য সভায় শওকত মোল্লা দাবি করেন, আরাবুলের কাজকর্মে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ ছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট দেওয়ার নামে আরাবুল বহু টাকা তুলেছেন, এমনকি নিজের ছেলেকে জেলা পরিষদের টিকিট দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে দরবার করেছেন। দলের নেতাকে খুনের ষড়যন্ত্রের ‘নায়ক’ বলা হচ্ছে আরাবুলকে। এ বিষয়ে আরাবুলের পুত্র হাকিমুল ইসলাম কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি নন।
মঙ্গলবার ভাঙড় কলেজ মাঠে তৃণমূলের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শওকত আরাবুলের নাম করে বহু দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। পঞ্চায়েত ভোটের পূর্বে তৃণমূল শওকতকে ভাঙড়ের দায়িত্ব দেয়। ঘাসফুল শিবিরের অন্দরের খবর অনুযায়ী, আরাবুল এবং শওকতের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল। এই প্রথম প্রকাশ্যে এক জন অন্য জনের বিরুদ্ধে কথা বললেন। শওকতের দাবি, তিনি একটি চিঠি পেয়েছেন, যাতে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার হিসাব রয়েছে। সেখানে পঞ্চায়েত ভোটের টিকিট বিক্রির নামে ৬ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা এবং পঞ্চায়েত প্রধান করার জন্য ২৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। এর মূলে ছিলেন আরাবুল। শওকত বলেন, ‘‘আমি ভাঙড়ের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আগে অবগত ছিলাম না। মাত্র এক মাস হল এসেছি, কী করে বুঝব! নিজের ছেলেকে পোলেরহাট থেকে তুলে এনে জেলা পরিষদে টিকিট দিতে হবে বলে আমার কাছে এসেছেন। দিয়েছি। তখন কী চলছে জানতাম না। ওকে কনভেনার এবং সভাপতি করা হয়েছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি। ভাঙড়ে নেতৃত্ব আসলে বলেছি, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছি। কারণ, আইএসএফের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমরা এক হয়েই কাজ করব। আরাবুলের প্রতি যা আছে থাক, আমরা একসঙ্গে লড়াই করব।’’
শওকত বলেন, “দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ভাঙড়ে যাঁকে আমি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম, সেই আরাবুল ইসলামের নামে আমি কয়েকটি চিঠি পেয়েছি।” জেলা পরিষদের সদস্য খাদিজা বিবির পক্ষে আরাবুলের সাহায্য চাওয়ার কথাও শওকত দাবি করেছেন। তিনি আরও বলেন, “যেখানে তাঁকে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল, সেখানেই আমি তাঁকে দাঁড় করিয়েছি। সেই খাদিজা বিবিও লোকসভা নির্বাচনে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাঁকে আর দলের কোনও মিটিং বা মিছিলে ডাকা হবে না। প্রশাসনিক সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।”
এটি শেষ নয়। শওকত আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেক নেতা ও কর্মী আহত এবং খুন হয়েছেন। আমি চেষ্টা করেছি সেই সব পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এবং নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে। কিন্তু এর মাঝে খইরুল ইসলামকে হত্যা করার পরিকল্পনা শুরু হয়, যা আমরা জানতাম না।” তৃণমূল বিধায়কের দাবি, এই তথ্য তিনি পেয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের কাছ থেকে। শওকত আরও বলেন, “একদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বলেন, ‘তুমি ভাঙড়ে অনেক নেতাগিরি করছ। সেখানে একজন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী খইরুল ইসলাম। তাঁকে হত্যা করার জন্য ১৮ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে। তুমি যে আরাবুল-আরাবুল করছ, সেই আরাবুলই এই ঘটনার মূল নায়ক। এটা আমার উপর ছেড়ে দাও।’ এই ঘটনা শুনে আমি দিল্লি যাই এবং তখনই আরাবুল গ্রেফতার হন।” তিনি জানান, আরাবুল বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়িত হয়ে ভাঙড়ে তৃণমূলকে ক্ষতি করেছেন এবং তিনি আরও অনেক তথ্য পেয়েছেন, যার তদন্ত দলের তরফে করা হবে।
যখন আরাবুলের ছেলে হাকিমুলের সাথে তাঁর বাবার বিষয়ে দলের বিধায়কের অভিযোগ নিয়ে যোগাযোগ করা হয়, তৃণমূলের যুব নেতা বলেন, “এ বিষয়ে আমার কোনো উত্তর নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।”