প্যারিস অলিম্পিক্সে ভারতের প্রথম পদক! শুটিং এ ব্রোঞ্জ পদক তুলে নিলেন মনু ভাকের !
রবিবার বিকাল সওয়া ৪টে প্যারিসের শুটিং রেঞ্জে যখন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হচ্ছিল, তিনি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। চোখে জল, মুখে বিজয়ের হাসি। মাত্র কিছুক্ষণ আগে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের প্রতিযোগীদের সাথে কঠিন লড়াই করেছেন। মাত্র .১ পয়েন্টের ব্যবধানে রৌপ্য পদক হাতছাড়া হয়েছে। ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে মনু ভাকের ব্রোঞ্জ জিতেছেন। তিনি ভারতের প্রথম মহিলা শুটার হিসেবে অলিম্পিকে পদক জয় করেছেন।
শনিবার যোগ্যতা অর্জনের পর্বে মনু তৃতীয় স্থানে ছিলেন। রবিবারের ফাইনালেও তিনি তৃতীয় স্থানেই শেষ করেন। শেষ শটের আগে তিনি দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। শেষ শটে মনু ১০.৩ স্কোর করেন, কিন্তু চিনের প্রতিযোগী ১০.৫ স্কোর করায় মনুর রুপোর পদকের আশা শেষ হয়ে যায়। নিজের শট নেওয়ার পর মনু চুপচাপ অপেক্ষা করেন। চিনের প্রতিযোগীর বেশি স্কোরের পর তিনি মুচকি হাসেন। মনে মনে হয়তো তিনি নিজেকে বোঝান, তিনি তাঁর সেরাটা দিয়েছেন। বাকিটা ভগবানের হাতে। গত কয়েক বছরে এমন চিন্তা করতে শিখেছেন তিনি। পরে মিক্সড জোনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি একই কথা বলেন, ভারতের পদকজয়ী মেয়েটি।
Manu Bhaker makes history as India’s first medallist at #ParisOlympics2024!
She clinched a bronze medal in shooting, becoming the first Indian woman to achieve this feat.
During a pre-Olympics 2024 interaction with PM @narendramodi, she praised government schemes like TOPs and… pic.twitter.com/tHa0J6HCuO
— MyGovIndia (@mygovindia) July 28, 2024
মনু শুটিংয়ে ১২ বছরের খরা কাটিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন যে এই পদক ভারতের প্রাপ্য ছিল। “ভারত দীর্ঘদিন ধরে এই পদকের জন্য অপেক্ষা করছিল, এবং আমার মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছে,” মনু উল্লেখ করেন। “আমরা আরও অনেক পদক জিততে চেষ্টা করব। দলের প্রত্যেকে পরিশ্রম করেছে, আমিও পরিশ্রম করেছি। শেষ শটে আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়াই করেছি এবং পরবর্তীতে আরও ভালো করার জন্য চেষ্টা করব।”
গীতায় কৃষ্ণ অর্জুনকে নিজের কর্ম করার উপদেশ দিয়েছিলেন, যা মনুও অনুসরণ করেন। তিনি বলেন, “আমি গীতা পড়েছি। ফাইনালের শেষ মুহূর্তে আমি এই শিক্ষাটাই মনে রেখেছিলাম। আমি কেবল আমার কাজটি করেছি এবং বাকিটা নিয়তির উপর ছেড়ে দিয়েছি। গীতায় অর্জুনকে কৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘কর্ম কর, ফলের আশা করো না।’ আমি সেই পথেই হাঁটার চেষ্টা করেছি।”
টোকিও থেকে ফিরে মনু কোচ যশপাল রানার সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এশিয়ান গেমসের সোনাজয়ী ভারতীয় প্রাক্তন শুটারের অধীনে আর থাকবেন না বলে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মনুর এই মেজাজ প্রায়ই তাকে সমস্যায় ফেলেছে। তবে ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে শিখেছেন যে তার মেজাজ আরও বিপদ ডেকে আনছে। ফলে, যশপালের সাথে কথা বলে তিনি সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেছেন। এবার টোকিওতে যখন মনু ফাইনালে পৌঁছেছেন, তখন যশপালের চোখে জল এসেছে। শিষ্যার সাফল্যে গুরু আবেগাপ্লুত হয়েছেন। এর পেছনে রয়েছে অনেক পরিশ্রম এবং ঘাম-রক্তের স্বাদ।