আরজি কর থেকে তৃণমূলের দুর্নীতি! মমতাকে চিঠি লিখে তৃণমূলের সাংসদের পদ ছাড়লেন সাংসদ জহর সরকার!
আরজি কর ঘটনার প্রতিবাদে জহর সরকার তৃণমূলের সাংসদ পদ ত্যাগ করেছেন। এ সংক্রান্তে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি প্রেরণ করেছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে আগেও দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তবে এবারে প্রথম কোনও শাসকদলের সাংসদ পদ ত্যাগ করলেন জহর। এছাড়াও তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে প্রেরিত চিঠিতে জহর উল্লেখ করেছেন, “গত এক মাস ধরে আমি ধৈর্য সহকারে আরজি কর হাসপাতালের নিন্দনীয় ঘটনার প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছি এবং ভেবেছি, আপনি কেন পূর্বের মমতা ব্যানার্জির মতো তৎপর হয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে সরাসরি কথা বলছেন না। বর্তমানে সরকার যে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা অত্যন্ত সীমিত এবং বিলম্বিত।”
I am quitting as MP primarily because of WB government’s faulty handling of the most spontaneous public movement following the terrible rape-murder case at RG Kar Hospital.
Quitting politics— to be with the people in their struggle for justice.
My commitment to values unchanged pic.twitter.com/V98R06ziny— Jawhar Sircar (@jawharsircar) September 8, 2024
প্রথমে, মমতা এই আন্দোলনকে বাম-বিজেপির আন্দোলন বলে চিহ্নিত করেছিলেন। তাঁর অনুসরণে তৃণমূলের অন্যান্য নেতারাও প্রকাশ্যে একই দাবি জানাতে থাকেন। জহর এই প্রবণতার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, আন্দোলনে যারা পথে নেমেছেন তারা অরাজনৈতিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত। তাই এই আন্দোলনে রাজনৈতিক তকমা লাগানো উচিত নয়। এরা কেউই রাজনীতি পছন্দ করেন না, কেবল বিচার ও শাস্তির দাবি করেছেন।’’ দুই বছর আগে, যখন রাজ্যের শাসক দল বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত হচ্ছিল, তখনও জহর সরকার প্রতিবাদ করেছিলেন। এবারও তিনি চিঠিতে দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, “মাননীয়া মহোদয়া, বিশ্বাস করুন, এই মুহূর্তে রাজ্যের জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখছি, তার মূল কারণ হল কিছু পছন্দের আমলা ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পেশিশক্তির প্রদর্শন। আমি আমার জীবনে এমন ক্ষোভ ও সরকারের প্রতি অনাস্থা আগে কখনও দেখিনি।” চিঠিতে জহর উল্লেখ করেছেন যে, তিনি সংসদে নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সরকারের ‘স্বৈরাচারী ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি’র বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (পার্থ চট্টোপাধ্যায়)-র বিরুদ্ধে উঠে আসা দুর্নীতির অভিযোগে তিনি বিচলিত হয়েছিলেন এবং দলকে আরও সক্রিয় হতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তখন দলের অনেক নেতা তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন, যা নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু রাজ্যে দুর্নীতি এবং দলের কিছু নেতাদের অন্যায় দাপট দেখে আমি হতাশ হয়েছি।”
শিক্ষা দুর্নীতি মামলায় পার্থ এবং পরবর্তীতে গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পর জহর দলের বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি দলের একাংশ পচে গেছে বলে মন্তব্য করেন, এবং বাড়ির লোক এবং বন্ধুবান্ধবেরা তাঁকে রাজনীতি ছাড়ার পরামর্শ দেন। এই প্রেক্ষিতে, তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় জহরের বিরুদ্ধে পাল্টা মন্তব্য করেন, বলেন যে জহর কখনও তৃণমূলের মিছিলে হাঁটেননি এবং দল তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদের পদ দিয়েছিল। তিনি দলের ভিতরে না বলে প্রকাশ্যে দলবিরোধী কথা বলেছেন, যা লজ্জার বিষয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।