যদি কোনো পুজো কমিটি সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তারা অন্যান্য সরকারি সুবিধাগুলি পাবে না— এমনটাই দাবি করা হচ্ছে বিধাননগর কমিশনারেটের তরফ থেকে। এই খবর পেয়ে সল্টলেকের যে সব পুজো কমিটি আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে অনুদান ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা নতুন করে ভাবনাচিন্তা করছে। কারণ সরকার পুজোর জন্য এককালীন ৮৫ হাজার টাকা ছাড়াও অন্যান্য সুবিধা যেমন পুরকর, দমকলের লাইসেন্স এবং বিদ্যুৎ বিলে ছাড় দিয়ে থাকে। এই তিন খাতে ৮০ থেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। তবে বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘এমন কোনো কথা আমাদের কোনো অফিসার বলেননি এবং আমাদের দায়িত্ব হল পুজোর অনুদানের চেক বিতরণ করা।’
সল্টলেকের কিছু পুজো কমিটি যেগুলি সরকারি অনুদান গ্রহণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাদের মধ্যে সি-এ, বি-সি, বি-এল, আই-এ ব্লক অন্যতম। অভিযোগ উঠেছে যে, বি-এল ব্লক অনুদান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানার পর, বিধাননগর দক্ষিণ থানা থেকে উদ্যোক্তাদের বলা হয়েছে যে দুর্গাপুজোর জন্য ৮৫ হাজার টাকার অনুদান না নিলে অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে না। এই পরিস্থিতিতে পুজো কমিটির কর্মকর্তারা বাসিন্দাদের সাথে পুনরায় আলোচনা করছেন। বি-সি এবং সি-এ ব্লকও স্থানীয় থানায় অনুদান না নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
অপরদিকে, পুলিশ এখন পর্যন্ত বি-সি ব্লকের পুজো কমিটির সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। বি-সি ব্লকের পুজো কমিটির সম্পাদক সম্রাট পাল বলেন, ‘৮৫ হাজার টাকা ফেরানোর বিনিময়ে বিদ্যুৎ বিল, পুরকর, ফায়ার লাইসেন্সে ছাড় পাওয়া যাবে না, এমন কিছু আমাদের জানানো হয়নি।’ সল্টলেকের সি-এ ব্লকের কর্মকর্তারাও একই মত প্রকাশ করেছেন।
সল্টলেকের আই-এ ব্লকের বাসিন্দারা বিধাননগর কমিশনারেটকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে, তারা মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে ছোট আকারের পুজো আয়োজন করবেন। উদ্যোক্তারা বলেছেন, সরকারি অনুদানের অর্থ এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করা হবে। প্রশাসন জানিয়েছে যে এটা সম্ভব নয়। এছাড়া, ৮৫ হাজার টাকা প্রত্যাখ্যান করলে অন্যান্য সরকারি সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা থেকে বাসিন্দারা সরকারি অনুদান নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করার দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি, পুরুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান নবেন্দু মাহালির একটি মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। পুরুলিয়া রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত লোকশিল্পীদের এক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে ডেপুটেশন, আন্দোলন এবং কুশপুতুল দাহ হবে, এবং এই কর্মসূচিতে সরকারের ভাতা প্রাপক শিল্পীরা থাকবেন। এটা কি উচিত? সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে, সেই মঞ্চে তারা থাকবেন? দু’নৌকোয় পা দিয়ে চলা সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পীরা মুখোশ পরে গাছের খাবে এবং তলারও কুড়োবে, এটা হবে না। যার নুন খাই, তার গুণ গাইতে হবে।’ এর প্রতিক্রিয়ায় জেলা বিজেপি সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, ‘শিল্পীদের ভাতা তাদের অধিকার, এর জন্য তাদের কোনও সরকারের তাঁবেদার হতে হবে না।’ জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া মন্তব্য করেন, ‘চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য করেছেন, দলের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নেই। মুখ্যমন্ত্রী সব লোকশিল্পীকে সুবিধা দিচ্ছেন, তিনি কোনও রাজনৈতিক ভেদাভেদ করেন না।’
নবেন্দু বলেছেন, ‘আমি যা বলেছি, তা ভেবেচিন্তেই বলেছি।’ আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তাররা রাজপথে নেমেছিলেন। তারা কলকাতা পুলিশের তৎকালীন কমিশনার বিনীত গোয়েলের কাছে প্রতীকী শিরদাঁড়া নিয়ে গিয়েছিলেন, যা বেলেঘাটার একটি পুজো প্যান্ডেলের সামনে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই শিরদাঁড়াটি ক্লাবের পিছনে সরিয়ে ফেলা হয়।
অভিযোগ উঠেছে যে, রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের চাপে এই পরিবর্তন ঘটেছে। তবে ক্যালচারাল সেক্রেটারি প্রসেনজিৎ দে এই অভিযোগ নাকচ করেছেন, বলেছেন— ‘আমাদের থিম জানুয়ারিতে তৈরি হয়েছিল। তার অনুযায়ী মণ্ডপের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। একজন বাবার মজবুত শিরদাঁড়া ও বিরাট হৃদয় কীভাবে সংসারকে ধরে রাখে, সেটাই আমরা দেখাতে চেয়েছিলাম। মণ্ডপে শিরদাঁড়ার পাশাপাশি হৃদপিণ্ডও ছিল। বিতর্কের জেরে অনেক কিছু সরানো হয়েছে, যার ফলে মণ্ডপের ক্ষতি হয়েছে।’