২৯৫ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ়ের প্রথম টেস্ট জিতল ভারত।
শুক্রবার যখন ভারতীয় দল পার্থের অপ্টাস স্টেডিয়ামে নামল, তখন ক’জন ভেবেছিলেন যে চার দিন পর পরিস্থিতি এমন দাঁড়াবে? সম্প্রতি নিউ জিল্যান্ডের কাছে ঘরের মাঠে ০-৩ ব্যবধানে হারের লজ্জা সহ্য করেছে ভারত। তার উপর, প্রথম টেস্টে অধিনায়ক রোহিত শর্মা খেলেননি, চোটের কারণে বাদ পড়েছেন শুভমন গিল। এমন একটি মাঠে ভারতকে নামতে হয়েছে যেখানে অস্ট্রেলিয়া কখনো হারেনি। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভারতের বিপক্ষে ছিল। চাপ বাড়ছিল গৌতম গম্ভীর ও বিরাট কোহলির উপর। কিন্তু চার দিন পর, সব পাল্টে গেল। যশপ্রীত বুমরারা হাসিমুখে মাঠ ছাড়লেন। অস্ট্রেলিয়ার ঘরের মাঠে ২৯৫ রানে জয় নিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত, যা সাজঘরে বসে উপভোগ করলেন রোহিত শর্মাও। ১৯৭৭ সালে মেলবোর্নে ২২২ রানের জয়ের রেকর্ড ভেঙে দিল ভারত। পিঠ ঠেকে যাওয়া ভারত, বিধ্বস্ত ভারত আবারও প্রমাণ করল যে তারা খোঁচা খাওয়া বাঘের মতোই ভয়ঙ্কর।
অস্ট্রেলিয়ার মাঠে খেলা অবতীর্ণ হলে ভারতের খেলা যেন পরিবর্তিত হয়। গতবার অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে অল আউটের লজ্জা থেকে উঠে আসা, চোটের কারণে প্রায় হাসপাতাল হয়ে যাওয়া দলের সিরিজ জয়, বা এবার ঘরের মাঠে চুনকামের পর প্রথম টেস্ট জিতে এগিয়ে যাওয়া—ভারত পরিবর্তন দেখিয়েছে। পার্থে শুরুটা ভালো হয়নি, প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫০ রানে অল আউট হয়েছিল ভারত। মসকরা শুরু হয়েছিল যে নিউ জিল্যান্ড দেখিয়েছে ভারত স্পিন খেলতে পারে না, এবার অস্ট্রেলিয়া দেখাল ভারত পেসও খেলতে পারে না। কিন্তু সেই মসকরা মিথ্যা প্রমাণিত হল, কারণ প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাঠেই ১০৪ রানে অল আউট করে দিল ভারত। যশপ্রীত বুমরা যে পিচে বোলারদের জন্য কিছু নেই, সেখানেও দুর্দান্ত বোলিং করেন। পার্থে প্রথম দিন বোলাররা যে সুবিধা পেয়েছিলেন, তা কাজে লাগানো হয়েছে বুমরার দ্বারা।
পরের দেড় দিন ভারতের ব্যাটাররা দাপট দেখাল। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে অল আউট হওয়া দলটি দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৮৭ রানে ডিক্লেয়ার করে। যশস্বী জয়সওয়াল ১৬১ রান করেন এবং বিরাট কোহলি ১০০ রান করেন। চতুর্থ ইনিংসে ৫৩৪ রান করা প্রায় অসম্ভব ছিল, পিচ যতই সহজ হোক না কেন। তৃতীয় দিনের শেষ কয়েক ওভারে ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া চাপে পড়ে। চতুর্থ দিনে বাকি ৭ উইকেট নিতে ভারতের পুরো তিন সেশন লাগেনি।
গতবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এক তারকা উদ্ভাসিত হয়েছিলেন, ঋষভ পন্থ। ব্রিসবেনে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সে ভারত সিরিজ জিতেছিল। এবার পার্থে নতুন এক তারকা উদয় হলেন, যশস্বী। তিনি আগেও টেস্টে অনেক ভালো ইনিংস খেলেছেন, কিন্তু পার্থের দ্বিতীয় ইনিংসে তার অসামান্য পারফরম্যান্স সকলের মনে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকবে।
Two delhi boys 💀 pic.twitter.com/rQP6Y7aUw4
— Border Gavaskar Trophy (@BGT2024_25) November 24, 2024
ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে তরুণ ওপেনার যশস্বী ক্রমেই নির্ভরযোগ্য নাম হয়ে উঠছেন। দেশের মাটিতে যেমন তিনি সাবলীল, বিদেশের মাটিতেও তেমনি স্বচ্ছন্দ। ভালো ব্যাটিং টেকনিক ছাড়া এটা সম্ভব নয়। পার্থের দ্রুতগতির পিচে অস্ট্রেলিয়ার জোরে বোলারদের কীভাবে সামলানো যায়, তা তাঁর ১৬১ রানের ইনিংসে দলের সিনিয়রদের দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর ২৯৭ বলের ইনিংসে ১৫টি চার এবং ৩টি ছয় ছিল। সুইং নিয়ে অযথা ভয় না পেয়ে বলের গতির মোকাবিলা করেছেন ব্যাক ফুটে খেলে। প্যাট কামিন্স এবং মিচেল স্টার্কেরা তাঁকে বিশেষ সমস্যায় ফেলতে পারেননি। বিট হলেও তিনি উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাট করার জন্য যে মানসিকতা প্রয়োজন, তেমন ভাবেই খেলেছেন। ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষের আক্রমণ মোকাবিলা করার পাশাপাশি, স্টার্কদের স্লেজিংয়ের জবাব মুখে দিতেও দ্বিধা করেননি।
অস্ট্রেলিয়াতে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা লোকেশ রাহুল এবং বিরাট কোহলির চেয়ে যশস্বীর অনেক কম। তবুও তারা ২২ বছর বয়সী এই তরুণ থেকে শিখতে পারেন— পার্থে কীভাবে রান করতে হয়। তিনি ভালো বল ছেড়ে দিয়েছেন, খারাপ বলে আঘাত করেছেন, জোরালো বোলারদের ব্যাক ফুটে মোকাবিলা করেছেন, এবং নাথান লায়নের বিপক্ষে স্টেপ আউট করতেও দ্বিধা করেননি। প্রতিটি বলের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন। বিদেশের মাটিতে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়া দলের জন্য দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা অবশ্যই চাপের বিষয়। যশস্বী সেই চাপ সামলানোর ক্ষমতা রাখেন।