“এই অন্ধকার শীঘ্রই কেটে যাবে এবং নতুন সূর্য উদিত হবে।” লন্ডনের জনসভা থেকে ঘোষণা শেখ হাসিনার!
আমেরিকায় বক্তৃতা দেওয়ার পর, রবিবার ব্রিটেনের এক সভায় শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা করেন। এই সভাটি ব্রিটেনের আওয়ামী লীগের সমর্থকরা আয়োজন করেছিলেন। হাসিনা তার ভাষণে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে আঙুল তুলেন। তিনি দাবি করেন যে, তিনি কাউকে খুন করেননি এবং যারা খুন করছেন, তাদের বিচার অবশ্যই হবে। এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে যে, হাসিনা কি ধীরে ধীরে রাজনীতিতে ফিরে আসছেন।
রবিবার আওয়ামী লীগের এক সভায় হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ‘অরাজকতা’ বিরাজ করছে। সেখানে নাগরিকরা শান্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁর মতে, “ঘরে শান্তিতে ঘুমানোর কোনো উপায় নেই। চুরি, ডাকাতি লেগেই আছে। যেকোনো সময় তদন্ত শুরু হতে পারে। এই তদন্তের নির্দেশ কে দিচ্ছে?” তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণের এখন ‘ন্যায়বিচার’ পাওয়ার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগের গণসংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্র লীগ’ এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেছে।
গত ৫ অগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জের ধরে জনবিক্ষোভের মুখে হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন এবং বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। তার দেশ ত্যাগের পর বাংলাদেশ এখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রশাসনিক পদ থেকে সরানো হয়েছে। হাসিনা ব্রিটেনের সভায় নতুন সরকারের প্রতি বারবার সমালোচনা করেছেন, তার মতে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে যারা মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, কিন্তু বন্যা ও ঝড়ের পর কেউ মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। তিনি দাবি করেছেন যে, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উপর হেনস্থা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, ‘মিথ্যা মামলা’ থেকে রেহাই দিতে হবে এবং তাদের কাজে ফেরাতে হবে।
বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সময় পুলিশ ও সরকারি কর্মীদের উপর হামলা, হত্যা এবং সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার এই ঘটনায় জড়িতদের ক্ষমা করেছে, যা নিয়ে হাসিনা কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “১৫ জুলাই থেকে যারা অপরাধ করেছে, তাদের ক্ষমা করা হয়েছে। এর মানে হলো, ‘মাস্টারমাইন্ড’ ইউনূস নিজেই প্রমাণ করেছেন যে, তারা অপরাধী। সব হত্যাকাণ্ড এবং আগুন সংক্রান্ত ঘটনাবলীর তদন্ত করে বিচার করা উচিত। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা উচিত। ইউনূস সরকারের কাছে দোষ থেকে মুক্তি দেওয়ার অধিকার নেই।”
হাসিনা দাবি করেছেন যে, জনবিক্ষোভের সময় তিনি ‘শক্তি প্রয়োগ’ করেননি। তিনি বলেন, “যদি আমি শক্তি প্রয়োগ করতাম, তাহলে অনেক মানুষের প্রাণ যেত। আমি চাইনি কারো প্রাণ যাক। পুলিশ শুধু রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে।” এরপর তিনি নোবেলজয়ী ইউনূসের দিকে অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর মতে, “ইউনূস হলেন মাস্টারমাইন্ড, খুনি, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী। আবু সাঈদের হত্যার জন্য এই মাস্টারমাইন্ডরাই দায়ী। তাঁরা চেয়েছিলেন লাশ ফেলে সরকার পতন ঘটাতে।”
গত মাসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়লাভ করার পর মুজিবুর রহমানের কন্যা তাঁকে অভিনন্দন জানান। তিনি ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা কেন হচ্ছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে মানুষের মৌলিক ও বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর লুট এবং মন্দির, গির্জা ধ্বংস করা হয়েছে।” তবে তিনি আশা করেন, “এই অন্ধকার শীঘ্রই কেটে যাবে এবং নতুন সূর্য উদিত হবে।”