বাজেট অধিবেশন শুরুর আগেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “প্রার্থনা করব মা লক্ষ্মী গরিব এবং মধ্যবিত্তদের উপর সদয় হবেন।” অর্থাৎ মধ্যবিত্তের দিকে যে নজর দেবে সরকার, সেটার ইঙ্গিত ছিল। নির্মলার বাজেট ঘোষণায় সেই সম্ভাবনা সত্যি হল। নির্মলা বাজেটে ঘোষণা করেছেন, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনও কর দিতে হবে না।
গত বছরের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে নতুন কর কাঠামোর ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের পরিমাণ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এ বছর সেই নিয়মে কোনও পরিবর্তন করেননি তিনি। ফলে বেতনভোগীদের ক্ষেত্রে ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হবে না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ঘোষণা করলেন, নতুন করকাঠামো অনুযায়ী ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সাধারণ রোজগারে কোনও আয়কর দিতে হবে না। তবে এই রোজগারের মধ্যে ক্যাপিটাল গেইন থাকলে সে ক্ষেত্রে এই ছাড় প্রযোজ্য হবে না। নির্মলার ঘোষিত আয়কর নতুন আয়কর স্ল্যাব অনুযায়ী, ০ থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনও কর দিতে হবে না। ৪-৮ লক্ষ রোজগারে ৫ শতাংশ কর। ৮-১২ লক্ষ টাকার রোজগারে করের হার ১০ শতাংশ। ১২-১৬ লক্ষ রোজগারে করের হার ১৫ শতাংশ। ১৬-২০ লক্ষ রোজগারে করের হার ২০ শতাংশ। ২০-২৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগারে ২৫ শতাংশ কর। এবং ২৪ লক্ষ টাকার বেশি রোজগারে করের হার ৩০ শতাংশ।
নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী, বিভিন্ন রকম ছাড়, বিনিয়োগ, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ধরলে ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা বেতনভুকদের কোনও কর দিতে হবে না। ১৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাঁদের বার্ষিক আয়,তারাও ৭০ হাজার পর্যন্ত ছাড় পাবেন। ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাবেন করদাতারা। তার চেয়ে বেশি আয়ের ক্ষেত্রেও সব মিলিয়ে কর কমবে। এর অর্থ মধ্যবিত্তদের হাতে বাড়তি নগদ থাকবে, যা পরোক্ষে অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়ানোর উদ্যোগ হিসাবে দেখা হচ্ছে।
এদিন বাজেট বক্তৃতায় নির্মলা সীতারমণ জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই কেন্দ্র নতুন আয়কর আইন আনবে। ন্যায়সংহিতার মতো আইনে ‘ন্যায়ে’র দিকে নজর দেওয়া হবে। করকাঠামো আরও সরলীকরণ করা হবে। নতুন আয়কর আইন সহজ ভাষায় লেখা হবে যাতে করদাতা এবং করগ্রহীতা উভয়েরই সুবিধা হয়। KYC পদ্ধতিও সরলীকরণ করা হবে।
চাকরিজীবীদের জন্য বাজেটে যেমন ‘কল্পতরু’ হয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, তেমনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষকদের জন্য ঋণের ঘোষণাও করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে একাধিক পণ্যে শুল্ক ছাড়ের কথাও জানিয়েছেন নির্মলা। এই সিদ্ধান্তের ফলে একাধিক জিনিসের দাম কমতে চলেছে, ফলে স্বস্তির শ্বাস ফেলবেন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা।
ওষুধের শুল্ক ছাড় নিয়ে বড়সড় ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। ক্যান্সারসহ একাধিক মারণরোগের ওষুধের দাম কমতে চলেছে। কারণ ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধে পুরোপুরি শুল্ক ছাড় ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়াও ৬টি জীবনদায়ী ওষুধে ৫ শতাংশ শুল্ক কমানো হয়েছে। ফলে সহজলভ্য হবে ওষুধ। সুরাহা মিলবে অসুস্থদের।
- আরও পড়ুন – খোদ কোলকাতায় পুলিশ পাহারায় সরস্বতী পুজোর নির্দেশ হাইকোর্টের! !মমতার আশীর্বাদে কোলকাতা হয়েছে কাবুল !
আমজনতার দৈনন্দিন ব্যবহারের একাধিক জিনিসের দামও কমতে পারে। বৈদুতিনিনিসে শুল কমানো হয়েছে ফলে সস্তা হবে এলইডি এবং এলসিডি টিভি। মোবাইলের যন্ত্রাংশে শুল্ক কমায় দাম কমবে মুঠোফোনের। ইলেকট্রনিক ব্যাটারির শুল্ক কমায় সস্তা হবে বৈদ্যুতিন গাড়ি। লেড এবং জিঙ্কের উপর থেকে প্রাথমিক শুল্ক প্রত্যাহার করায় ব্যাটারির দাম কমবে। সস্তা হবে মেডিক্যাল এবং সার্জিক্যাল সরঞ্জামও।
চর্মজাত দ্রব্যের উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করার ফলে জুতো, বেল্ট, ব্যাগের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমবে। জাহাজের যন্ত্রাংশের দামও কমবে। দেশে তৈরি পোশাকও সস্তা হবে। সামুদ্রিক মাছসহ বিভিন্ন সিফুডের দামও কমবে। তবে বাজেটণ টিভি এবং মোবাইলের স্ক্রিনের দাম বাড়তে পারে।তবে কিছু বিশ্লেষকদের মতে, চাকরিজীবীদের হাতে নগদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী কয়েকদিনে ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। সেই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে কিছুদিনের জন্য বাজারে মূল্যবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে।