শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সূত্রে শিরোনামে রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস (Leaps and Bounds) সংস্থার নাম। এবার সেই সংস্থা নিয়েই আদালতে বিস্ফোরক দাবি করল ইডি। ইতিমধ্যেই তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস (Leaps and Bounds) নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছে ইডি! জানা যাচ্ছে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (Enforcement Directorate) কালীঘাট এবং আমতলার বেশ কয়েকটি জমি-বাড়ি স্ক্যান করছে। ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কালীঘাট রোড অঞ্চলের ৭টি ফ্ল্যাট ও ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের আমতলা মৌজায় একটি পাঁচতলা বাড়ি এবং জমির খুঁটিনাটি কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তে উঠে এসেছে বলে খবর। আদালতে নথি পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করেছে যে এই সম্পত্তিগুলি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস এর মালিকানাধীন ।
ইডি আদালতে লিখিতভাবে জানিয়েছে , ওই সমস্ত জমি-বাড়ি ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।যার বর্তমান বাজারদর প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। মাসখানেক আগে বিচারভবনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Recruitment Scam) পঞ্চম সম্পূরক চার্জশিট পেশ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেই সাথে কয়েক হাজার পাতার নথিও জমা দেয়া হয়েছে। জানা যাচ্ছে, ওই নথির মধ্যে কালীঘাট রোড এলাকা এবং ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের আমতলা মৌজার সম্পত্তিগুলি বাজেয়াপ্ত করার কথা জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি মঙ্গলবার আদালতকে আরও জানিয়েছে যে, একটি বেসরকারি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একটি অ্যাকাউন্ট।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে ইডি (ED) সূত্র উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে , ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ বিনিয়োগের আরও সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। তা বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চালু রয়েছে বলে আদালতের নথিতে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’
ইডির দাবি, গত জুলাই মাসে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডের নিউ আলিপুরের অফিস সহ বেশ কয়েকটি সংস্থায় অভিযান চালিয়ে তল্লাশি করা হয়। সেই সময় বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল ও নথি পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকারীদের দাবি, সংশ্লিষ্ট সংস্থার অ্যাকাউন্ট এ জাল নথি এবং হাওয়ালার মাধ্যমে নগদ ও বিভিন্ন ‘ভূতুড়ে’ কোম্পানির অ্যাকাউন্ট মারফত টাকা জমা পড়ার তথ্য পাওয়া যায়। তদন্তে জানা গেছে, ওই টাকা পরবর্তী সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করতে থাকে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস।

তদন্তকারীদেরে জানা যাচ্ছে, ইডির তরফ থেকে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের (Leaps and Bounds) ডিরেক্টর অমিত বন্দোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী লতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিশ জারি করে বিভিন্ন সম্পত্তি কেনার টাকার উৎসের নথি জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই সময়ই কালীঘাট এবং ডায়মন্ড হারবারের সম্পত্তি কেনার টাকা কোথা থেকে এল সেই প্রশ্ন ওঠে । ইডি সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থার তরফ থেকে ওই সম্পত্তি ক্রয়ের কোনো আইনসম্মত নথি পেশ করা হয়নি।
এই বিষয়ে এক ইডি কর্তা বলেন, ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ব্যবসার কোনও মাথামুণ্ডু নেই। ওই সংস্থাটির সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত বেশ কয়েকটি সংস্থার যোগসাজের খোঁজ মিলেছে। ওই সব সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ পরিষামূলক সেবা প্রদান করা হয় বলে চুক্তি করা হয়েছিল। তবে কী পরিষেবা কিংবা কীসের পরামর্শ সেটার উল্লেখ ছিল না। শুধুমাত্র ওই সংস্থাগুলির মাধ্যমে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন হয়েছে কিংবা নগদ জমা পড়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। ইডির চতুর্থ ও পঞ্চম চার্জশিটে ওই সকল লেনদেনের বিশদ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে’।
ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস (Leaps and Bounds) সংস্থার অন্যতম প্রাক্তন পরিচালক হলেন তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদও বটে। ২০১৪ সালে ওই সংস্থার পরিচালক পদ ইস্তফা দেন অভিষেক। অমিত বন্দ্যোপ্যায় এবং লতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল নেতার বাবা-মা।